ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

কাল চালু হচ্ছে ঈশ্বরদী-রূপপুর ২৬ কিলোমিটার রেললাইন

কাল চালু হচ্ছে ঈশ্বরদী-রূপপুর ২৬ কিলোমিটার রেললাইন

পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রেলে মালামাল ও যন্ত্রপাতি পৌঁছাতে ২৬ কিলোমিটার রেললাইনসহ প্রকল্পের কাজ শেষ।

ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে নবনির্মিত রেলওয়ে স্টেশনের নাম ‘রূপপুর’ নামকরণ করা হয়েছে। ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেললাইন প্রকল্পটি। আগামীকাল প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন করতে ব্যস্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার গতকাল জানান, আগামীকাল সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তিনি আরো বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল ছাড়াও অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে, এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে সহজে মালপত্র আনা-নেয়া করতে পারবে। এতে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে, চাঙ্গা হবে ঈশ্বরদীসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ১৯১৫ সালে ঈশ্বরদীর পাকশী পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের কিছুদিন পর তৎকালীন সাঁড়াঘাট রেলস্টেশনের সন্নিকটে নির্মিত হয়েছিল বরফকল। সেখান থেকে বরফ পরিবহনের জন্য ব্রিটিশ রেল কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরদী-পাকশী রুটে একটি রেললাইন নির্মাণ করে। পরবর্তী সময় পাকশী বিভাগীয় সদর দপ্তরের রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার জন্য ওই রেলপথ দিয়ে শুধু বিনা পয়সার একটি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। তখন এ রেলপথ দিয়ে শুধুই ‘পাইলট’ নামে তিন বগির একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। ওই ট্রেনে টিকিট কাটার প্রয়োজন না থাকার কারণে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসা-যাওয়া করতেন। এছাড়া ঈশ্বরদী-পাকশী রেলপথে সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় ট্রেনে চলাচল করত।

নব্বই দশকের শুরুতে তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো কারণ ছাড়াই ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় শুধু রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের মোটর ট্রলি মাঝেমধ্যে চলত এ রেলপথ দিয়ে।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়েতে দৃশ্যমান উন্নয়ন শুরু হয়। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দীর্ঘ ২৬ বছর পরে ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল করার রুটের পরিত্যক্ত রেললাইনগুলো সরিয়ে ফের ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পর্যন্ত রেলপথসহ সংস্কার শুরু হয়।

২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ চলে প্রকল্পে। ভারতের জিপিটি ও বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েল গেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, একটি ‘বি’ শ্রেণির সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্লাটফর্ম, সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনের দুইপাশ জুড়ে লুপলাইন সংস্কার করা হয়েছে, প্লাটফর্ম উঁচু করার কারণে এখন একসঙ্গে ১৮টি ট্রেন এসে দাঁড়াতে পারবে, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। পুরোনো রিলে-ইন্টারলকিং পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারইজড পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলে সুইচ কেবিন থেকে বাটন চাপলে ট্রেন আসা যাওয়ার রেললাইনটি ক্লিয়ার হবে সহজে, কোনো ট্রেন আউটারে এসে লাইন ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ রেলরুটে মালপত্র আসা-যাওয়ার জন্য ট্রেনের যে লোকোমোটিভ ইঞ্জিন আসবে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ কারখানায় ডকপিট নির্মিত হয়েছে। এক সময়ে একটি মিটারগেজ ট্রেনের ইঞ্জিন, নয়টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন একসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, উদ্বোধনের পর এ প্রকল্পটি পরিপূর্ণ সক্ষমতায় আসলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে যোগ করবে এক নতুন মাত্রা। ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রেলপথে এ প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর প্রকল্প কেন্দ্রে সহজে শুধু মালামাল-যন্ত্রপাতি পৌঁছাবে না, ঈশ্বরদী-রূপপুর এলাকায় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে করে সহজে মালপত্র আনা-নেয়া করতে পারবে। এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য করা মানুষদের। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ চালু হলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে রাজস্ব আয় বাড়বে। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে ইপিজেড আছে, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে গেল। এরইমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। আগে ঈশ্বরদী থেকে মোংলা বন্দর ব্রডগেজ লাইন ছিল। এই প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ-ব্রডগেজ কানেক্টিভ হয়ে গেল। পণ্যবাহী ট্রেনে মোংলা বন্দর থেকে ব্রডগেজ ট্রেন চলে আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিটার গেজ ট্রেন আসতে পারবে। এ প্রকল্পের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অনেক মর্যাদা বেড়ে গেল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত