জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনী গ্রামে সমতল ভূমিতে কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন ও তার স্ত্রী সুমি বেগম। এরই মধ্যে বাগান থেকে কমলা বিক্রিও শুরু করেছেন এই দম্পতি। কমলার আকার বড় আর স্বাদেও বেশ মিষ্টি।
সমতল ভূমিতে কমলা চাষে এই দম্পতির সাফল্য দেখতে ও পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা আসছেন। ভালো ফলনে লাভজনক হওয়ার কারণে কমলা চাষে উদ্যোগও নিচ্ছেন অনেক কৃষক।
উদ্যোক্তা ইমরানের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন কয়েকটি বারি-২ জাতের কমলার চারা। সেই চারাগুলো থেকে গ্রাফটিং করে আরও চারা বাড়ান। এখন ইমরানের বাগানে ১৩০টি কমলার গাছ রয়েছে। ১৩০টি গাছের মধ্যে ৬০টি গাছে কমলা ধরেছে। বেশিরভাগ কমলা পেকে হলুদ হয়ে গেছে। আবার বেশ কিছু কমলা সবুজ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ১৫-৪০ কেজি পর্যন্ত কমলা ধরেছে। প্রতি কেজি কমলা পাইকারি ১৩০ টাকা করে দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা।
উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন বলেন, আমি এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। করোনার সময় ব্যবসায় খুব মন্দা যাচ্ছিল, তো খুব সংকটময় অবস্থায় ছিলাম। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন বাধ্য হয়ে কৃষিতে আসলাম। কৃষিতে আসার পর দেখলাম। সহজে আমি কিসে লাভবান হতে পারব। তখন আমি কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হই।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাইরের দেশ থেকে কমলা আমদানি করে থাকি। এতে অনেক টাকা রিজার্ভ থেকে চলে যায়। সকলে যদি কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হই, তাহলে রিজার্ভের টাকা থেকে এসব ফল আমদানি করতে হবে না। এজন্য বেকার যুবক যারা আছেন, তারা কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। এর চেয়ে আর সহজ কোনো চাষ নেই। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে এই উদ্যোক্তা বলেন, চাষের প্রথম দিকে অনেক ধরনের খারাপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে। কমলা হবে না, হলেও ভালো হবে না, ছোট, তিতা হবে। তবে তা হয়নি। অনেক সুন্দর কমলা হয়েছে। এখন সেই মানুষরাই সাধুবাদ জানাচ্ছে।
ইমরানের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, কমলা বাগানের বয়স প্রায় তিন বছর। অনেক পরিশ্রমের ফলে সুফল আসছে। অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু এখন তারা প্রশংসা করছেন। কমলা অনেক ভালো এবং সুমিষ্ট। আমি সংসারে কাজের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা করি।
কমলার চারা কিনতে আসা ওই এলাকার বৃক্ষপ্রেমী এনায়েতুর রহমান আকন্দ বলেন, আমি কমলা বাগানের বিষয়টি জেনে এখানে এসেছি। বাগানটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফলের বাগান আছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ আছে, কিন্তু কমলার গাছ নেই। আমি এখান থেকে দশটি গাছ কিনেছি।
তিনি বলেন, বাগানে কমলার ফলন দেখার মতো হয়েছে। আসলে বাংলাদেশের আবহাওয়াতে আমাদের অঞ্চলে এমন কমলা হবে তার ধারণা ছিল না। এই কমলা মিষ্টিও বটে। যারা কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হতে চান তারা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে চাষ করতে পারেন। এতে অন্তত বাইরের দেশ থেকে আমাদের কমলা আমদানি করতে হবে না
এ ব্যাপারে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, সমতলে ইমরানের কমলা চাষ একটি বিপ্লব। কমলা সাইট্রাস জাতীয় ফল, এটি পাহাড়ে হয়। কিন্তু এটি এখন সমতলেও হচ্ছে। অনেক বেকার যুবক চাইলে কমলা চাষ করতে পারেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমলা চাষের সুযোগ রয়েছে। যারা তরুণ উদ্যোক্তা আছে তারা এগিয়ে আসুন। চাকরির সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে আপনিই উদ্যোক্তা হয়ে অন্যদের চাকরি দেয়ার কথা ভাবুন।