পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সরকার প্রথম থেকেই উসকানি দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে বিএনপি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে এবং করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারো তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সন্ত্রাসের দল। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, তারা সন্ত্রাস, ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করায় তারা অত্যন্ত পারদর্শী। ওইভাবে তারা আবারো আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।
এই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তারা একটা অনিশ্চয়তার দিকে বাংলাদেশকে নিতে যেতে চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগকে তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ের পাল্টা কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তিনি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১০ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উস্কানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি।
তিনি বলেন, এবার প্রথম আমরা আওয়ামী লীগকে রিঅ্যাক্ট করতে বাধ্য করছি। এটা নতুন একটা ফ্যানোমেনা। অর্থাৎ তারা ভীত, সন্ত্রস্ত, তারা এখন নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে তাদের অপকৌশলে আবার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই কাজগুলো করছে। আমরা আবারো জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব। আমাদের আল্টিমেট লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দল চাইছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক।
সামনে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি থাকবে কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত নেই। ভবিষ্যতে আসবে কি না এটা বলতে পারবো না। প্রয়োজন বলে দেবে, প্রয়োজন বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে? জনগণই বলে দেবে। জনগণ যদি বলে যে, এখন হরতাল চাকা বন্ধ, তখন চাকা বন্ধ হবে। আমরা সবসময় পিসফুল প্রোগ্রাম চাচ্ছি-আমরা বিশ্বাস করি এটাতে।
হরতালের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মধ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আন্দোলন বলতেই ওইটা (হরতাল-অবরোধ) বোঝেন। এটা ঠিক না। আপনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেন। ওখানে কয়টি হরতাল হয়? হরতাল হয় না। আন্দোলন হয়। রাস্তায় লোক নামে, লাখ লাখ লোক হেঁটে যায়। ভারতজুড়ে প্রোগ্রাম করলো কংগ্রেস। হাঁটলো ১৪৯ দিন ধরে, হাঁটছে, এগুলোই তো আন্দোলন। আমরা যে কর্মসূচি করছি-এগুলো কি আন্দোলন না? এ আন্দোলনের মাধ্যমে একদিন জনমত এমন জায়গায় আসবে যে, তখন ওই হরতাল দিতে হবে না। ওরা এমনিতেই চলে যাবে।
তিনি বলেন, ওরা (সরকারি দল) তো অলিখিতভাবে, অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়। আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম তখন তারা তিনদিন আগে থেকে হরতাল দেয়, সব বন্ধ করে দেয়, রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রাক, স্টিমার-লঞ্চসহ পরিবহণ।
১০ দফার চলমান আন্দোলন কোন পথে যাবে, কোন পর্যায় যাবে তা ভবিষ্যতে বলে দেবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, ভাঙচুর করেছিল সেটা আপনারা জানেন। তবে আমরা এটা মনে করি না, আমরা বিশ্বাস করি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের পরাজিত করব।
সংবাদ সম্মেলনে গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তদন্ত দাবি করে যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগের কথা জানান দলটির মহাসচিব।
তিনি বলেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে পুলিশকে ব্যবহার করে বিএনপির আন্দোলন দমানোর ষড়যন্ত্র করছে। পুলিশকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেন ব্যবহার করা না হয়, স্থায়ী কমিটির সভায় সে দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, উন্নয়নের কথা বলে মানুষের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ এই সরকার। ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি নস্যাৎ করার জন্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারদের মুক্তি দাবি করছি।
সভায় ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হতাহতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দুই দেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গায় দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা ১৪টি মন্দির প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানানো হয় স্থায়ী কমিটি সভায়। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।