বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যৌথ উদ্যোগে অর্থাৎ বাংলাদেশের উদ্ভাবিত করোনা কিটের ব্যবহারিক কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বিএসএমএমইউ’র বি ব্লকের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস শ্রেণি কক্ষে এর উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ণয়ক এন্টিবডি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের ধরণ শনাক্তকরণ কার্যক্রম অর্থাৎ জেনোম সিক্যুয়েন্সিং নিয়ে একাধিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আজকে করোনা ভাইরাসের যে কিটটি উদ্ভাবিত হলো তাও গবেষণার ফলে সম্ভব হয়েছে। গবেষণার মাধ্যমেই একদিন ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, বিসিএসআইআর, বিএসএমএমইউ ও ঢাবি অর্থাৎ দেশে উদ্ভাবিত কিটটি শতগুণে ভালো। এটা এটি দেশের একটি বিরাট অর্জন। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে অত্যন্ত স্বল্প খরচে নির্ভুভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এই কিটটি উদ্ভাবনের ফলে সারা দেশে একটা সময়ে এই কিটটিকে সরবরাহ করা সম্ভব হবে এবং বিদেশ থেকে ডলার খরচ করে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দ্রুত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যন্যা প্রতিষ্ঠানের গবেষণার মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণের বিশ্বমানের একটি কিট উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, বেসিক সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরপদার, অধ্যাপক ডা. শিশু অনুষদে ডিন অধ্যাপক ডা. রঞ্জিত রঞ্জণ রায়, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কিটের ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০ কপি ভাইরাস/মিলি, যেখানে আমদানি করা অন্য কিটগুলোর শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১ হাজার কপি ভাইরাস/মিলি। অর্থাৎ বিসিএসআইআরের কোভিড কিট দ্বারা একেবারেই ন্যূনতমসংখ্যক ভাইরাসকে শনাক্ত করা যাবে। ফলে রোগের উপসর্গ প্রকাশের আগেই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা সম্ভব হবে। অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে আরএনএ এক্সট্রাকশনের পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করা হয় এ কিট। এজন্য কিটের উৎপাদন খরচ বাণিজ্যিক কিটগুলোর চেয়ে কম। তাই উদ্ভাবিত এই কিট দ্বারা প্রতিটি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় খরচ হবে ২৫০ টাকা। এই করোনা কিটের বৈশিষ্ট হলো- BCSIR COVIDER টি গ জিনকে টার্গেট করে করা হয়েছে। গ জিনের Mutation তুলনামূলক কম ও বিশ্বে প্রথম গ জিনকে টার্গেট করে কোভিড ডিটেকশন কিট আবিষ্কৃত হয়েছে, উক্ত কিটটির জন্য যে primar এবং probe envi করা হয়েছে তা BCSIR এর বিজ্ঞানীরা কর্তৃক ডিজাইনকৃত, যার ফলে কিটটি বাজারে প্রচলিত এর চেয়ে আলাদা। উদ্ভাবিত কিট এর Specificity, Sensitivity এবং Accuracy গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড এর সমমান ও বাণিজ্যিক কিটগুলো থেকে উন্নত মানের। কিটটির Limit of Detection (IOD) ১০০ কপি ভাইরাস/মিলি যা বাজারে প্রচলিত কিটের চেয়ে অনেক কম, তাই এই কিটটি ইনফেকশনের শুরুতেই কোভিড ১৯ শনাক্ত করতে সক্ষম। এই কিটটি সকল ধরনের ভ্যারিয়েন্ট (Alpha, Beta, Gamma, Delta, Omicron) ইত্যাদি শনাক্ত করতে সক্ষম। উক্ত কিটটি Glycogen ব্যবহার করে RNA extraction পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় স্বল্প খরচে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে সক্ষম।