পরীক্ষার বিষয় বাড়ায় পাসের হার কমেছে
বললেন শিক্ষামন্ত্রী
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কমার এবং শতভাগ ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার পেছনে গতবারের চেয়ে বর্ধিত সিলেবাস তথা বেশি বিষয়ে পরীক্ষা হওয়া কারণ হিসেবে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, গতবার মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে, সংক্ষিপ্তভাবে। সেখানে বেশিরভাগই ভালো করেছে। সেজন্য আমাদের পাসের হারও প্রায় ৯৫ শতাংশ ছিল। এবার যখন ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্রে পরীক্ষা হয়েছে, তখন সবাই তত ভালো করতে পারেনি। সেজন্যই শূন্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এবার এইচএসসিতে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর আগে এসএসসিতে শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমরা দেখতে গিয়ে দেখেছি, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নন এমপিওভুক্ত। অল্প কয়েকটি এমপিওভুক্ত, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা ছিল।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে কোভিড মহামারির কারণে তিন বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট; জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন। কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্য্যা গতবার ছিল পাঁচটি, এবার তা বেড়ে ৫০টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসির ফলাফল জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি বলেন, আমরা বলছি শতভাগ ফেল করেছে। এর আগে এসএসসির ফলাফলে দেখা গেছে, শতভাগ ফেল করা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিয়েছে একজন বা দুইজন। সেইখানে একজন বা দুইজন পাস করতে না পারলে সেই প্রতিষ্ঠান ‘শতভাগ ফেল করেছে’- এই তকমা গায়ে লেগে যায়। পাসের হার ও জিপিএ ফাইভ কমা এবং শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির পেছনে কিছু প্রতিষ্ঠানকেও দায়ী করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসএসসির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমরা বলেছিলাম, কোন সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন, কীভাবে তাদেরকে আমরা পাশে দাঁড়াতে পারি; যেন তাদের শিক্ষার্থীরা কৃতকার্য হতে পারে।
তাদের কাছে আমরা গত কয়েক বছরের তথ্য চেয়েছি, আমরা যা যা চেয়েছি তারা তা পাঠিয়েছে। আমরা মার্চের প্রথম সপ্তাহে তাদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করব। সেখানে দক্ষ অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারব, সেই বিষয়গুলো দেখব। একইভাবে এইচএসসির ক্ষেত্রেও তা করা হবে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ‘সুচারুভাবে’ সম্পন্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফরম পূরণ করেছে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর প্রতি পরীক্ষার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যতীত ২০২২ সালের পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে দুইটি আবশ্যিক, তিনটি নৈর্বাচনিক ও একটি চতুর্থ বিষয়সহ ছয়টি বিষয়ে মোট ১২টি পত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের নম্বর এসএসসি/সমমান ও জেএসসি/জেডিসি/সমমান থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেএসসি/সমমানের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি/সমমানের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। বরাবরের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান বোর্ডের ওয়েব সাইট থেকে তার প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ডাউনলোড করতে পারছে। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্রমশ উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্বপ্নের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ এবং গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয় তা হলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কি হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও; চারপাশে তাকাও, মানুষকে ভালোবাসো। নীতি নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থ চিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হও।
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আপনার সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না; দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই বৃথা যাবে ।
তিনি বলেন, যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন তাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে শিক্ষকদের ভূমিকাই প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও আপনারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
করোনা অতিমারির পরও এবারের এইচএসসির ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা যতদূর সম্ভব পাঠদান করেছেন। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা আছে। আর মূল কৃতিত্ব শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় যে রূপান্তর ঘটানো হচ্ছে, তাতে সব শিক্ষার্থী যাতে ন্যূনতম পাস করতে পারে, সেই প্রচেষ্টা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এইচএসসির সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর : গুচ্ছ পদ্ধতিতে এক পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তির আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সঙ্গে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই একটাই ভর্তি পরীক্ষা হোক।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করব, যে সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে, সেই সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক। আমরা চাই একটাই ভর্তি পরীক্ষা হোক। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, একই বিষয়ে বারবার পরীক্ষা হওয়া উচিত না। যেমন ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, গণিত বা ইংরেজি বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বরে পরীক্ষা হওয়া উচিত। যতদিন না হয় ততদিন চলমান গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষাটা আরও কীভাবে ভালো করা যায়, তার জন্য কাজ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আনতে ১০ বছর লাগলেও মাত্র একটি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির জন্য সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে আনতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এখন দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে এলেও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতে আসেনি। এরই মধ্যে একটি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্পন্ন করার আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদসহ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।