সুসংবাদ প্রতিদিন

মটরশুঁটিতে কৃষকের হাসি

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নাটোরে চলতি মৌসুমে মটরশুঁটির বাম্পার ফলন হয়েছে। মটরশুঁটির ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জনপ্রিয় এ মটরশুঁটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে নাটোরে ৯৬০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির আবাদ করা হয়েছে। এ বছর নাটোর সদর উপজেলায় ৮০০ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ১০ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় উপজেলায় ২৫ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি আবাদ করা হয়েছে। যা গত মৌসুমে ১ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে ৫৯ হেক্টর কম জমিতে মটরশুঁটি আবাদ হয়েছে। নারী শ্রমিকরা জানান, একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ কেজি মটরশুঁটি তুলে থাকেন। প্রতি কেজি মটরশুঁটি ১০/১৫ টাকা কেজি দরে তুলছেন। নারী শ্রমিকরা দিনে ১৫০/২৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত চলে মটরশুঁটি তোলার কাজ। নারীরা তাদের উপার্জিত টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যয় করেন বলে জানান। চাষিরা জানান, ১ বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষে ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ১৫/২০ মণ মটরশুঁটি পাওয়া যায়। সব খরচ বাদে এক বিঘা জমি থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। বর্তমানে মটরশুঁটি পাইকারি বাজারে ৬০/৭০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে ৭৫/৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মটরশুঁটি চাষ করে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে নারী শ্রমিকরা বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অপরদিকে দেশে সবজি উৎপাদনও বাড়ছে।

সদর উপজেলার ছাতনী দিয়ারপাড়া গ্রামের নারী শ্রমিক রাবেয়া বেগম বলেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পর সংসারের কাজ শেষ করে অবসর সময়ে মটরশুঁটি তুলতে যাই। প্রতিদিন ১০/১৫ কেজি মটরশুঁটি গাছ থেকে সংগ্রহ করি। প্রতি কেজি মটরশুঁটি ১৫ টাকা কেজি দরে তুলি। এই টাকা দিয়ে নিজের এবং সংসারের কাজে ব্যবহার করি। এতে সংসারে বাড়তি আয় হয়। চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা শেফালী বেগম বলেন, সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিদিন মটরশুঁটি তুলতে যাই। সারা দিনে প্রায় ১৫/২০ কেজি মটরশুঁটি তুলতে পারি। এই টাকা দিয়ে সংসারের ছোট খাটো চাহিদা মিটিয়ে ছেলেমেয়েদের পোশাক এবং তাদের পড়াশোনার কাজে আসে। আগদিঘা এলাকার নারী শ্রমিক মাজেদা বেগম বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে জমিতে মটরশুঁটি তুলে থাকি। এ বছর মটরশুঁটি আবাদ কম হয়েছে। এলাকায় কয়েকজন চাষি মটরশুঁটি চাষ করেছেন। মাত্র দুই সপ্তাহ মটরশুঁটি তুলেছি। প্রায় তোলা শেষ পর্যায়ে। মটরশুঁটি তুলে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে নাতি-নাতনির জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনেছি। সামনের সপ্তাহে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাব বেড়াতে। সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মটরশুঁটি চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, এ বছর ১ বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষ করেছি। বেশ ভালো ফলন এসেছে এবং বাজারমূল্য অনেক ভালো। প্রায় ৩০ হাজার টাকার মটরশুঁটি বিক্রি করেছি। এ বছর মটরশুঁটির বেশ চাহিদা। প্রতি কেজি মটরশুঁটি ৬০/৬৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি করেছি। খুচরা বাজারে তা ৭০/৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বাজার মূল্য বেশ ভালো। আশা করছি, সব খরচ বাদে ১৫/২০ হাজার টাকা আয় করতে পারব। দিঘাপতিয়া এলাকার মটরশুঁটি চাষি মোহাম্মদ নূর ইসলাম বলেন, এ বছর প্রথম দেড় বিঘা জমিতে মটরশুঁটি আবাদ করেছি। তিনবার জমি থেকে মটরশুঁটি তোলা হয়েছে। প্রথমবার বেশ ভালো দাম পেয়েছি। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত এ দাম ঠিক থাকবে। প্রায় ২৫ হাজার টাকার মটরশুঁটি বিক্রি করেছি। এছাড়াও মটরশুঁটির ফল বিক্রির পর অবশিষ্ট গাছ গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেকে গরুর খাদ্য হিসেবে জমি চুক্তি হিসেবে গাছ কিনে নিয়ে যায়। এতে করে বাড়তি একটা আয়ও হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নাটোর জেলায় ৯৬০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির আবাদ করা হয়েছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। বাজার বেশ চাহিদা রয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মটরশুঁটি ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বর্তমানে মটরশুঁটির বাজারমূল্য অনেক ভালো। এতে করে চাষিরা মটরশুঁটি আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।