অন্যরকম

যে দেশের মানুষ খুবই সুখী

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও সুখী মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত দেশটির নাম ভানুয়াতু। মূলত দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অবস্থিত ছোট দ্বীপ দেশ এটি। দেখতে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ওয়াই- এর মতো। ছোট-বড় মতো ৮৩টি দ্বীপ নিয়ে ১২ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ ভানুয়াতুতে বসবাস করছে প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার মানুষ। দ্বীপগুলোর বেশিরভাগই পর্বতময়। ৮৩টির মধ্যে ৬৫টিতে জনবসতি রয়েছে। বৃহৎ দুটি দ্বীপ মেথিও ও হান্টারসহ ১৪টি দ্বীপ আয়তনে ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। মেলেনেশিয়ানরা দেশটির মূল অধিবাসী। দেশটি পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যাই বেশি। তাদের জাতীয় ভাষা ‘বিসলামা’ হলেও, অফিসিয়াল ভাষা বিসলামা, ফ্রেঞ্চ এবং ইংলিশ।

ভানুয়াতুর অধিবাসীদের রয়েছে মাটির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। মাটি তাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও দেশটির মানুষদের কখনো অভুক্ত থাকতে হয় না। আবহাওয়া ও মাটি ভালো থাকায় সব রকমের ফল, শাকসবজি অতি সহজে উৎপাদন করতে পারে তারা। এজন্যই দেশটির বেশিরভাগ মানুষেরই জীবিকা কৃষিনির্ভর। এছাড়াও জেলে হিসেবেও কাজ করে। প্রায় আড়াই লাখ জনসংখ্যার দেশ ভানুয়াতুতে নেই কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ, নেই কোনো শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু তবুও আমেরিকা ও অনন্য ধনী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ হিসেবে খেতাব অর্জন করেছে ভানুয়াতু। নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন (এনইফ) পরিচালিত ‘হ্যাপি প্লানেট ইনডেক্সে’ অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র। এই শান্তির পেছনে অর্থের কোনো ভূমিকা নেই।

ভানুয়াতু দেশের মানুষের কাছে অর্থ উপার্জন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। নেই ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও। এজন্য দেশটির অনেক মানুষ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নিজ দেশে জেলে হিসেবে কাজ করেন। কারণ তাদের পূর্বপুরুষরা জেলের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বেকারত্ব ও প্রচলিত অর্থে দারিদ্র্যতা বিরাজ করলেও কর আরোপ ও সরকারি কঠিন নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই এখানে নেই।

ভানুয়াতুর মানুষ দুটি প্রভাবশালী চরিত্রে বিশ্বাস করে থাকে। একজন ব্রিটিশ অন্যজন মার্কিন। বলা যায় এই দুই পুরুষের নামে তাদের ধর্মবিশ্বাস। দেশটির মানুষ মনে করে রাজ পরিবারের সঙ্গে তাদের পূর্বের কোনো সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে দেশটিতে প্রচলিত আছে নানা কল্পকাহিনী ও প্রথা।

কম জনসংখ্যার দেশ ভানুয়াতুতে প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। শূকর এখানকার মানুষের জন্য দামি পশু। ভানুয়াতুতে বসবাসরত প্রভাবশালীরা বিভিন্ন উৎসবে শূকর দান করে থাকেন। এখানকার অধিবাসীদের জীবন সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য তাদের সবার বাসায় কাঠের তৈরি নানা বাদ্যযন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। সুখী মানুষের দেশ ভানুয়াতুতে কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ভানুয়াতু পুলিশ ফোর্স। তাদের সাহায্য করে আধাসামরিক মোবাইল ফোর্স। সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পিত যৌথভাবে কাস্টমস ও অভ্যন্তরীণ আয়কর সংগ্রহকারী বাহিনীর ওপর। দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হলেও ছোট দ্বীপ দেশটির অর্থনীতি এখন মোটামুটিভাবে দাঁড়িয়ে আছে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটকের ওপর। তবে পর্যটনকে কেন্দ্র করে দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পূর্বে ওশেনিয়া অবস্থিত এই দেশটি সম্পর্কে মানুষ না জানলেও বর্তমানে বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করে। দেশটি তার সুন্দর রেইনফরেস্ট, অপূর্ব সৈকত এবং স্থানীয় জনগণের হাসিমুখগুলো দিয়ে সজ্জিত একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভানুয়াতুতে শিক্ষাব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেশটির রাজধানী পোর্ট ভিলাতে অবস্থিত। রাজধানী পোর্ট ভিলা ভানুয়াতুর বৃহত্তম শহর। যে অল্পসংখ্যক কারখানা কার্যালয় রয়েছে, তার বেশিরভাগই পোর্ট ভিলাতে অবস্থিত। ছয়টি প্রদেশে বিভক্ত দেশটির যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। ভানুয়াতুতে ডেইলি পোস্ট নামে দৈনিকটি এই সপ্তাহের ছয় দিন প্রকাশিত হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে দেশটিতে।