সুসংবাদ প্রতিদিন

ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে সফল উজ্জ্বল

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর)

শেরপুরের নকলায় মাশরুম চাষ করে লাভবান হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী উজ্জ্ব¡ল মিয়া। উজ্জ্ব¡ল মিয়া উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে।

উজ্জ্বল মিয়া ২০১৬ সালের শেষের দিকে শখেরবসে বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত সবজি মাশরুমের চাষ শুরু করায় প্রথম কয়েক বছর তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকাস্থ মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে স্বল্পমেয়াদি একটি প্রশিক্ষণ নেয়ার পর, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মাশরুম চাষ করায় এখন সে লাভের দেখা পেয়েছেন। উজ্জ্বল এরই মধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার মধ্যে একজন সফল মাশরুম চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। উজ্জ্বল মিয়া জানান, করোনা অতিমারির সময় ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় কম দিতে হতো। এতে লাভ হতো না। মাঝেমধ্যে দোকান ঘরের ভাড়া নিজের পুঁজি থেকে দিতে হতো। তাই বিকল্প আয়ের উৎস্য খোঁজতে গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষের দিকে ঝুঁকেন। মাশরুম চাষের পরিধি বৃদ্ধি করেন। শুরুতে ৩০টি স্পনের প্যাকেট দিয়ে তার মাশরুম চাষের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তার সংগ্রহে ১৫০টি খড়ের বড় সিলিন্ডার, যার ওজন ২ কেজি থেকে ৩ কেজি এবং ৫০০টি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কাঠের গুঁড়া ও তোষের ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এখন মাশরুম থেকে সব খরচ বাদে মাসে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তার আয় হচ্ছে। মাশরুম চাষে আগ্রহী হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উজ্জ্বল মিয়া বলেন, করোনা কালে আমি যখন দিশাহারা হওয়ার পথে, তখন চরবস্তী এলাকার কৃষিবিদ শফিউল আলম সুইম নামে এক বড় ভাই আমাকে সাহস দিয়ে মাশরুম চাষের দিকে আগ্রহী করে তুলেন। তার উৎসাহ পেয়ে সাভার থেকে স্পন বা মাশরুমের বীজ এনে নিজে স্পন প্যাকেট তৈরি করছি। ঘরে বসে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করা যায়, তাই উজ্জ্বলের দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ কেউ কয়েকটি করে প্যাকেট কিনে নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে সফলতার মুখ দেখছেন। বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয় নানা জাতের মাশরুম। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে ফলানোর জন্য উপযুক্ত অয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম। অয়েস্টার মাশরুম ফলানোর পক্ষে আবার শীতকাল উপযুক্ত। বাকি দুটোর উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে, যখন ঠান্ডা কমে যায়।

এই ধরনের মাশরুম চাষ করার জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার। এগুলো হচ্ছে- স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খবার। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়-দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক অ্যাসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী। তাই চিকিৎসকরা হাই প্রোটিনযুক্ত এই মাশরুম চাষ ও খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, মাশরুম ‘গরিবের মাংস’ হিসেবে খ্যাত। এটি খেতে সুস্বাদু। এটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন একটি সবজি জাতীয় ফসল, যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করছেন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় এটি মানুষের নিকট সমাদৃত হয়েছে। বর্তমান বাজারে দিন দিন মাশরুমের চাহিদা বাড়ছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে এরই মধ্যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন।