সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল আকতাব গওছে জামান আরেফ বিল্লাহ হজরত শাহ্ সুফি আলহাজ খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার (র.) তিন দিনব্যাপী ৫৯তম ওরস শরিফ গতকাল শনিবার কালীগঞ্জের নলতা শরিফে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। ওরস শরিফের পথম দিনে (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নলতায় পাক রওজা শরিফের পাদদেশে মাহফিল মঞ্চে বয়ান পেশ করেন আলহাজ মুফতি মাওলানা শাইখ মোহাম্মাদ উসমান গণী (ঢাকা), শাইখ সৈয়দ ড. হাসান আল আযাহারী (ঢাকা), শাইখ মোস্তাফা রহিম আল আযাহারী (ঢাকা), হজরত মাওলানা আব্দুল আলী আল ক্বাদেরী (হবিগঞ্জ) ও হাফেজ মাওলানা মো. কামরুজ্জামান (পারুলিয়া)। এ সময় বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এএফএম গোলাম সরফুদ্দীন, আলহাজ ড. আবু তৈয়ব আবু আহমদ (নলতা শরিফ), আলহাজ এএফএম এনামুল হক (মহাপরিচালক খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউট), আলহাজ মাওলানা মো. আবু সাঈদ (নলতা শরিফ) ও আলহাজ ড. মো. আবুল কাশেম (নলতা শরিফ)। দ্বিতীয় দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে মাহফিলে বয়ান পেশ করেন হাফেজ মাওলানা মুফতি নুর মোহাম্মদ আল ক্বাদেরী (হবিগঞ্জ); মো. মনিরুল ইসলাম (পরিচালক খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউট); আলহাজ মাওলানা মো. আবু সাঈদ (নলতা শরিফ শাহী জামে মসজিদ); হাফেজ কারী মাওলানা শেখ শামসুদ্দিন চর্তুবেদী আল হুছাইনি (যুক্তিবাদী বক্তা, মুহাদ্দিস বীরলাপুর, মুম্বাই, ভারত)। শেখ শামসুদ্দিন জিয়ারাত ও ইলমে তাসাউফের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। শায়খুল হাদীছ হজরত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (খতিব, সোবহান বাগ জামে মসজিদ, ঢাকা); আলহাজ অধ্যাপক হাফেজ হাফিজুর রহমান (খতিব গুলশান-১ জামে মসজিদ, ঢাকা)। এ সময়ে বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন আলহাজ মো. সাইদুর রহমান (কেন্দ্রীয় মিশন), আলহাজ মোহাম্মদ সেলিমউল্লাহ (ঢাকা), আলহাজ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি (সভাপতি, নলতা কেন্দ্রীয় মিশন), আলহাজ আবুল ফজল (নলতা কেন্দ্রীয় মিশন), আলহাজ ডা. আকবার হোসেন (নলতা কেন্দ্রীয় মিশন)।
গতকাল শনিবার সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পাক রওজা শরিফে আয়োজিত আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠানে আলহাজ অধ্যাপক ডা. রুহুল হকের (এমপি) সভাপতিত্বে কোরআন তেলাওয়াত করেন কারী মো. কবিরুল ইসলাম, মিলাদ ও ফাতেহা পাঠ, হামদ, নাত-এ রসুল, মুর্শিদি পাঠ করেন হাফেজ মাওলানা মুফতি আশিকুর রহমান, মো. মানছুরুর রহমান (ঢাকা মিশন), মো. ফিরোজ আলম (মাঘরী), মো. মাছুম বিল্লাহ (নলতা মিশন ফাজিল মাদ্রাসা), মো. আখতাব হোসেন বাচ্চু (মহানগর মিশন ঢাকা), আনিছুর রহমান (নলতা শরিফ)। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন আলহাজ রাশেদ আহম্মেদ (চট্টগ্রাম মিশন)।
এ সময় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মো. হুমাউন কবীর জেলা প্রশাসক, (সাতক্ষীরা)। আলোচনা পেশ করেন আলহাজ এ এফ এম এনামুল হক, আবু তৈয়ব মাহবুবে খোদা (হবিগঞ্জ, মিশন), আলহাজ ড. আব্দুল মজিদ (সাবেক সচিব), আলহাজ মো. আবু সাঈদ জিহাদি (নলতা শরিফ)। তাওয়াল্লাদ শরিফ পাঠ করেন মুফতি আশিকুর রহমান (নলতা শরিফ)। পাক রওজা শরিফে চাদর পেশ করেন খাদেম আলহাজ মো. আব্দুর রাজ্জাক, রবিউল ইসলাম, শহিদুল হক, শফিকুল হুদা, আলী হায়দার (কে বি হাউজ)। মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ মো. আবু সাঈদ জিহাদি।
ওরস উপলক্ষ্যে অপরূপ সাজে সজ্জিত নলতা শরিফ : পবিত্র ওরস শরিফ উপলক্ষ্যে পাক রওজা শরিফ ছিল অপরূপ সাজে সজ্জিত। পাক রওজা শরিফের চতুর্দিকের ফুল বাগিচাগুলো বৈদ্যুতিক রঙ্গিন আলোর ছোঁয়ায় ছিল দৃষ্টিনন্দন, রাতের রওজা শরিফ ভক্তকুলের কাছে ছিল অতি আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। হাজার হাজর ভক্ত-আশেকান পীর কেবলার (র.) রুহানি ফয়েজ লাভের আশায় পাক রওজা শরিফ জিয়ারত করেন। এছাড়া ওরস শরিফ উপলক্ষ্যে নলতা শরিফের প্রধান প্রধান সড়ক ও মোড়ে গেট ও লাইটিংসহ তোরণ নির্মাণ করা হয়।
রওজা শরিফের পাদদেশে ময়দানে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেল ও মঞ্চ ছিল নানা রকমের তাজা, কাঁচা ও স্টেশনারি ফুলের কারুকার্য খচিত, বৈদ্যুতিক আলোয় সজ্জিত। দূরগামী-আকাশচুম্বি সার্চ লাইটের আলোকোচ্ছটায় গোটা এলাকার আকাশেও ছিল সাজ সাজ রব। এছাড়াও শাহী জামে মসজিদ, তৎসংলগ্ন হজরত খান বাহাদুর মোবারক আলীর মাজার, পীর ভবন, পীর আম্মার মাজার ও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন ভবনে ছিল বিরল আলোক সজ্জা, যা ছিল চমকপ্রদ ও হুদয়গ্রাহী।
এদিকে পবিত্র ওরস শরিফের দ্বিতীয় দিনে লাখ লাখ নর-নারীর পদচারণায় মুখরিত ছিল নলতা শরিফ। এ দিনে ২ লক্ষাধিক মানুষের মেহমানদারির জন্য কেন্দ্রীয় মিশনকে হিমশিম খেতে হয়। নলতা শাহী জামে মসজিদে জুমার নামাজে অর্ধলক্ষাধিক মুসল্লির ঢল নামে। জামে মসজিদসহ সংলগ্ন রাস্তা ও মাহফিল ময়দানে মুসল্লিদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পীর কেবলা (র.) জন্মসার্ধ শতবার্ষিকীতে এবারের ৫৯তম ওরস শরিফ ছিল অনেকটা জমজমাট। এবারের ওরস শরিফে আহ্ছানিয়া মিশন পরিচালিত বিভিন্ন হেফজ খানার উত্তীর্ণ ১২ জন হাফেজকে পাগড়ি প্রদান করা হয়।