নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাব

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে ধ্বংসস্তূপে কত মানুষ চাপা পড়ে আছে, তা এখনো কারও জানা নেই। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো, স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন সব মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। উদ্ধারকারীরা আঘাত, তৃষ্ণা কিংবা বৈরি আবহাওয়া সব ভুলে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ঘটনার ৬ দিন পর নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজারে পৌঁছায়।

জাতিসংঘ বলেছে, এই সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ানও বলেছেন, ১৯৯৯ সালে পূর্ব ইস্তাম্বুলে যে ভূমিকম্প আঘাত হানে এটি তার চেয়ে ৩গুণ শক্তিশালী। সে সময় নিহত হন ১৮ হাজার মানুষ।

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে তুরস্ক ও সিরিয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সিরিয়ার ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চল এক দশক ধরে যুদ্ধের কারণে আগেই বিপর্যস্ত ছিল। সিরিয়ার কিছু অংশ দেশটির শাসক বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে সেখানেও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তুরস্ক স্বভাবতই এতো বড় বিপর্যয় কাটাতে নিজের জনগণের দিকে মনোনিবেশ করছে, এটাই স্বাভাবিক। তবে দাতা দেশগুলোর অবশ্যই ভাবতে হবে সিরিয়াকে পরিত্যাগ করা যাবে না।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, দেশ দুটিতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও মনোযোগ রাজনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গত দুই দশক ধরে দেশ শাসন করছেন। আগামী মে মাসে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তবে এমন একটি নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন, যা ইতিমধ্যেই তার জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এমনিতেই এরদোয়ানের আর্থিক নীতির কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের বেশি হওয়ার কারণে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটাররা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য তার প্রতিক্রিয়া আমলে নেবে। শুধু তাই নয় প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তার সরকার ১৯৯৯ সালের ভূ-কম্পনের পর এ ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে আরও বেশি প্রস্তুতি নেয়নি। ২০০২ সালে এরদোয়ান একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তার নতুন দল, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি ১৯৮৩ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর থেকে তুরস্ক শাসন করছে। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে তৎকালীন সরকারের দুর্বল প্রতিক্রিয়া, তারপরে ২০০১ সালে একটি আর্থিক বিপর্যয়কে ভুলভাবে পরিচালনা করা এসব কারণে তখনকার সরকারের পতন হয়। এখন এরদোয়ান একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

একদিকে, একটি অর্থনৈতিক সংকট এবং অন্যদিকে আরেকটি মানবিক সংকট। ভোটাররা উভয় ক্ষেত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। তুরস্ক সরকারের হিসাবে, প্রায় ৬ হাজার ভবন ধসে গেছে। সে অনুযায়ী বিষয়টি তদন্ত করা জরুরি। শুধু তাই নয় প্রমাণ পাওয়া যাবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছিল এবং বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করা হয়েছিল। তবে এরদোয়ানের সময় অর্থনৈতিক উত্থানের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল অবকাঠামো নির্মাণ, যা তার প্রথম দশকের ক্ষমতায় জনপ্রিয় করে তুলেছিল। যদিও ধসে পড়া ভবনগুলো বেশিরভাগই তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় বসার আগে নির্মিত হয়েছিল। একটি বড় ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত হতে এরদোয়ানের দুই দশক লেগেছে। তবে এটাও ঠিক যে তুরস্ক বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় ফল্ট লাইনের একটিতে বসে আছে। ভোটের জরিপে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা এখনই কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত মাসে এরদোয়ান জুন থেকে মে মাসে প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসেন।

তবে বিরোধীরাও এখনও শীর্ষ পদের জন্য একক প্রার্থী দিতে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। ভূমিকম্পের পর প্রেসিডেন্ট দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। যা প্রায় ভোট শুরুর আগ পর্যন্ত তিন মাস স্থায়ী হবে। এই জরুরি অবস্থা এরদোয়ানের পক্ষে সমালোচনা বা বিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ করে দিতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখন নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারেন। কেননা, তুরস্ক এরইমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গভীর সংকটে পড়েছিল। টেকটোনিক প্লেট এটিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট