কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন অনন্য উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদন পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। করোনার পর সুস্থ হয়ে উঠছে পৃথিবী। ফলে কৃষিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। যা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। সৌভাগ্যবশত কৃষিতে এর ব্যবহার বহুবিধ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক শাখা-প্রশাখা আছে। তার মধ্যে দুটি শাখায় এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। একটা হলো কম্পিউটার ভিশন। আরেকটা হলো প্রেডিকশন বা পূর্বাভাস। আজকের বিষয় যান্ত্রিক দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ রাখব।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব নয় এমন ক্ষেত্র খুব কমই আছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য কৃষি একটি উজ্জ্বল ক্ষেত্র। ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, ভারতসহ অনেক দেশ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে। আর এগুলো উৎপাদন অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষিকাজ করেছে সহজ। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন অনন্য উদাহরণ।

জমি রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে কৃষির মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) [Internet of Things]। এই সম্পূর্ণ ব্যাপারকে বলা হচ্ছে স্মার্ট এগ্রিকালচার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স লেন্স জুমের সাহায্যে মেশিনকে আকার এবং টেক্সচার চিনতে প্রশিক্ষিত করা যায়। রোবটিক্সের মাধ্যমে মাটি ও গাছপালা পর্যবেক্ষণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত প্রযুক্তি ফসল ফলানো, মাটির স্বাস্থ্য এবং হার্বিসাইড প্রতিরোধ করে। আগাছা ও গাছকে আলাদা করতে পারে। ফুল কবে ফুটবে, ফল কবে পাকবে, কত ফল-ফসল পাওয়া যাবে অনুমান করে। সঠিক সময়ে কীট শনাক্ত করে। তাই কৃষিক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ খুব দ্রুত গতিতেই বাড়ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্রপ মডেলিং, ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম, প্রিসিসন এগ্রিকালচার ইত্যাদি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো- যুক্তিযুক্ত কারণ বের করা এবং এমন প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষমতা, যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সর্বোত্তম সুযোগ পায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সাবসেট হলো মেশিন লার্নিং যা এই ধারণা বোঝায় যে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের কাছ থেকে সহায়তা ছাড়াই নতুন ডেটা থেকে শিখতে এবং মানিয়ে নিতে পারে।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা এবং আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার অংশ। ইতিমধ্যে কৃষিতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একদল তরুণ আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগণ যুগান্তকারী ‘ডা. চাষী’ [উৎ. ঈযধংযর] মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে-স্টোরে রিলিজ করেছেন। এই অ্যাপ দিয়ে এখনই আপনি ছাদণ্ডবাগান এবং মাঠের ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে পারেন। এই অ্যাপ দিয়ে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তুললে ‘ডা. চাষী’ বলে দেবে আপনার ফসলের সমস্যা ও সমাধান।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের রোগবালাই চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে ‘রাইস সলিউশন’ (সেন্সরভিত্তিক ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা) নামের একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করেছে। যা, ধানের ক্ষেত থেকেই আক্রান্ত ধান গাছের ছবি দেখে রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম। ২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গাজীপুরে ব্রি’তে অনুষ্ঠিত ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিযুক্ত কারণ বের করা এবং এমন প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষমতা, যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সর্বোত্তম সুযোগ পায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সাবসেট হলো মেশিন লার্নিং।

কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত ড্রোন কাস্টমাইজ করে ইন্টিগ্রেট করা যায়। ড্রোন একবার ফসলের ক্ষেতের উপর দিয়ে উড়ে গেলে ওই এলাকার সার্বিক অবস্থা জানাতে সক্ষম। ড্রোন ব্যবহার করে যা জানা যায়—ফসলের মাঠের আর্দ্রতা পরিমাপ করা, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি নির্ধারণ করা, শস্য রোপণ ডিজাইন করা, বীজ রোপণ করা, পোকার আক্রমণ জানা (ইমেজ প্রযুক্তি), কীটনাশক স্প্রে করা, সেচ মনিটরিং করা, ফসলের উৎপাদন জানা, ফসলের সার্বিক মনিটরিং করা, মাটির নিউট্রেন্ট, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, লবণাক্ততা জানা, ফসলের নিউট্রেন্টের অভাব জানা, ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি জানা, ওয়েদার ফোরকাস্টিং জানা ও আগাম নির্দেশনা দেয়া, ফসলের আগাম সম্ভাব্য ফলনের পূর্ভাবাস দেয়া, কৃষি কল সেন্টার সেবা দেয়া, সর্বোপরি কৃষিপণ্যের বাজারদর জানা।