পাঠক ঘুরছে অথচ কিনছে না
কাগজের দাম বাড়ার প্রভাব এবারের বইমেলায়
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মামুন তুষার
বেশ কয়েকটি বইয়ের তালিকা নিয়ে গ্রন্থমেলায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিয়ান আরমান। পছন্দের বই কেনার জন্য স্টলে স্টলে ঘুরেন তিনি। কিন্তু যখনই দাম জিজ্ঞেস করছেন, তখনই হতাশ হচ্ছেন তিনি। এজন্য নির্দিষ্টসংখ্যক বই কিনতে পারেননি। আশাহত হয়ে ফিরে আসেন মেলা থেকে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এবারের বইমেলায় বইয়ের দাম গত কয়েকটি বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রাখা হচ্ছে। শুধু আরিয়ান নয়; ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকা এমন অসংখ্য পাঠক মেলা থেকে ফিরে আসছেন।
বিভিন্ন প্রকাশনী সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রকাশনা শিল্পেও। কাগজ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বইয়ের দামও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, যারা নির্দিষ্ট বেতনে চাকরি করতেন তাদের বেতনও বাড়াতে হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে এবারের বইমেলায়। তবে বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় এ বছরও নতুন নতুন বই আসছে। একই সঙ্গে পাঠকদের পদচারণাও বেশি। কাগজের দাম বাড়লেও বই ছাপানোর ক্ষেত্রে খুব একটা কমতি দেখা যায়নি। কিন্তু দাম আগের তুলনায় বেশি। সবকিছুর দাম বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে বইমেলায়।
প্রকাশকরা জানান, এ বছর কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দামও বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু পাঠকের কথাও আমরা চিন্তা করেছি। এজন্য ভর্তুকি দিয়ে অতিরিক্ত দাম না রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবুও পাঠকদের কাছে মনে হচ্ছে, তুলনামূলক বেশি দাম রাখছে বিক্রেতারা। এজন্য চাইলেও পছন্দমতো বই কিনতে পারছি না। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ বলেন, কয়েকটি বই কিনব বলে গ্রন্থমেলায় এসেছিলাম। কিন্তু যেই বই কিনতে চাই, সেগুলোর দাম বাজেটের তুলনামূলক বেশি। হোস্টেলে থেকে অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয়। সে কারণে বেশি দামে বই কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য একটি বই কিনে চলে এসেছি। ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা হক বলেন, বইমেলায় এসেছিলাম বই কিনব বলে। কিন্তু মেলায় এসে দেখি বইয়ের দাম বেশি। ভেবেছিলাম ১০ থেকে ১২টি পছন্দমতো বই কিনব। কিন্তু কয়েকটি কিনেই টাকা শেষ হয়ে গেছে। বইয়ের দাম সমন্বয় করা উচিত।
বিক্রেতারা বলেছেন, বইয়ের দাম অন্য জিনিসের থেকে খুব একটা বাড়েনি। বই ৫০-১০০ টাকার মধ্যেই বেড়েছে। নতুন বইয়ের দাম একটু বেশি। এর ফলে কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে। তবে আশা করি সামনে আরও বাড়বে।
শোভা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, কাগজের দাম বাড়ায় বই প্রকাশ করাই কঠিন। আবার যারা চাকরি করেন, তাদেরকেও বেতন বাড়ানো হয়েছে। যদিও আমরা ভর্তুকি দিয়ে বইয়ের দাম কিছুটা কম রাখার চেষ্টা করছি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বই কম বিক্রি হচ্ছে।