বাংলাদেশে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিস্থিতি নির্দেশ করে যে, দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব জনগণের নিকট পৌঁছাচ্ছে না; বৈষম্যের নিষিদ্ধ ক্ষেত্র এবং ‘হ্যানসেনের রোগ’ হিসেবেও পরিচিত কুষ্ঠকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী আইনসমূহের খসড়া প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ গতকাল এ কথা বলেন। ‘পদ্ধতিগত বর্জন, কাঠামোগত বৈষম্য ও প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার একাধিক স্তরের অন্তরালে রয়েছে কুষ্ঠ’, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ রেপোর্টিয়ার এলিস ক্রুজ বাংলাদেশে তার আট দিনব্যাপী সফরের শেষে এক বার্তায় একথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউ এইচও) তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক কুষ্ঠ রোগীর তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম এবং সংশ্লিষ্ট উপাত্তে চলমান সংক্রমণ, বিলম্বিত রোগ নির্ণয় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পার্থক্যক থাকার বিষয়টি উঠে আসে। ক্রুজ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠ নির্মূল করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি আমি এই মর্মে উদ্বিগ্ন যে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারের অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবে রূপদানের জন্য বিভিন্ন সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা, সূচক ও মানদণ্ডের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্ভাব্য বেশি সংখ্যক কুষ্ঠ রোগী, গুরুতরভাবে বিলম্বিত রোগ নির্ণয়, চলমান সংক্রমণ ও শিশুদের বিকলাঙ্গতা এবং রোগ সম্পর্কিত ব্যাপক বৈষম্য ও কলঙ্ক আরোপের মতো বিষয়গুলোতে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি পুনর্বাসন, পুনর্গঠনমূলক সার্জারি, সহায়তামূলক বিভিন্ন ডিভাইস ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তাসহ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সেবার অপ্রতুলতার বিষয়টি তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাঝে কুষ্ঠ রোগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় উপাত্ত এবং রোগের বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকার বিষয়ে ক্রুজ দুঃখ প্রকাশ করেন। উন্নয়নের অধিকার সংক্রান্ত মৌলিক নীতিসমূহ, যেমন সমতা, আত্মণ্ডসংকল্প, অংশগ্রহণ ও ন্যায়বিচার পূরণ হচ্ছে না, বিশেষ রেপোর্টিয়ার বলেন। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগ করতে পারছে না, আর না পারছে দেখতে যে, তাদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ক্রুজ বলেন। বিকলাঙ্গদের জন্য নির্ধারিত সুবিধা ও অন্যান্য নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পসমূহে চলমান দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন, তত্ত্বাবধায়নকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতার অভাব এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী লোকদের প্রতি চিরায়ত পিতৃসুলভ খবরদারির বিষয়ে উক্ত বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার সফরকালে ক্রুজ সরকার, সুশীল সমাজ সংগঠনসমূহ, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীগণ এবং বিভিন্ন জেলায় বসবাসকারী কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নীলফামারী ও বগুড়ায় স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা ও কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত জনগণকে দেখতে যান। ২০২৩ সালের জুনে মানবাধিকার কাউন্সিলের সঙ্গে সাক্ষাতে বিশেষ রেপোর্টিয়ার তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। মিস এলিস ক্রুজ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূরীকরণবিষয়ক প্রথম জাতিসংঘ বিশেষ রেপোর্টিয়ার, যিনি মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক ২০১৭ সালের নভেম্বরে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। মিস ক্রুজ ইকুয়েডরের ল’ স্কুল অব ইউনিভার্সিটি এন্ডিনা সিমন বলিভারে এক্সটার্নাল প্রফেসর হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কতগুলো পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার বিষয়ে, বিশেষ করে কুষ্ঠ সংক্রান্ত গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কুষ্ঠ আরোগ্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন সেবা গ্রহণে কুষ্ঠ রোগীদের অংশগ্রহণ জোরদার করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তিনি কুষ্ঠ রোগ ও এই রোগের সঙ্গে জড়ানো কুসংস্কার নির্মূল করার ওপর গবেষণা ও এই বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন এবং কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছেন। বিশেষ রেপোর্টিয়ারগণ হলেন মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ কার্যপ্রণালী বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত একটি পরিষদের অংশ। এই বিশেষ কার্যপ্রণালী বিশেষজ্ঞগণ জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার আওতায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সবচেয়ে বড় একটি পরিষদ এবং সাধারণভাবে এটি হলো কাউন্সিলের স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী এবং পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা যা কোনো বিশেষ দেশে উ™ূ¢ত বিভিন্ন পরিস্থিতি অথবা বিশ্বের সব অংশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উ™ূ¢ত সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে থাকেন। বিশেষ কার্যপ্রণালী বিশেষজ্ঞগণ স্বেচ্ছাপ্রাণোদিত হয়ে কাজ করেন; তারা জাতিসংঘ সংস্থায় কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন এবং তারা কাজের জন্য কোনো বেতন গ্রহণ করেন না। তারা যে কোনো সরকার বা সংস্থার এখতিয়ার থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিজস্ব সামর্থ্যরে আলোকে তারা সেবা দিয়ে থাকেন। কুষ্ঠ রোগবিষয়ক বিশেষজ্ঞের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজ অনুসরণ করুণ: Facebook https://www.facebook.com/srleprosy and Twitter @srleprosy বাংলাদেশ সফরবিষয়ক অধিক তথ্য ও মিডিয়া জন্য যোগযোগ করুণ: ইয়ঙ্কিও আহন ([email protected]/+41 79 444 4860) ।