কাজী আরেফের স্মরণসভায় ইনু
লুটেরাদের বিষ দিয়ে মারতে হবে
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুফল ঘরকাটা ইঁদুর উইপোকারা যেন খেয়ে না ফেলতে পারে তার জন্য ঘরকাটা ইঁদুর উইপোকা দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের বিষ দিয়ে মারতে হবে এবং বৈষম্যের অবসানে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কর্নেল তাহের মিলনায়তনে বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ কাজী আরেফ আহমেদের ২৪তম হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের চলমান রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানপন্থী সকল সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ছোবল মারছে। আঘাত হানছে। বিএনপি ও এর রাজনৈতিক সঙ্গীরা নির্বাচনকে ঢাল বানিয়ে বাংলাদেশকে তালেবানি পথে নিতে দেশে সংবিধান বিরোধী ভূতের সরকার আনতে চাচ্ছে। ইনু বলেন, ভূতের সরকার আনার অপরাজনীতি বন্ধের মন্ত্র ও কবজ সংবিধানেই আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর কোনো দিনই ভূতের মতো উল্টা দিকে হাঁটবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সোজা পথে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি পথেই দৌড়াবে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানই বাংলাদেশের রাজনীতির একমাত্র পথ। সংবিধানের পথ থেকে বিচ্যুৎ করার অপরাজনীতি রুখে দেয়া হবে। জাসদ সভাপতি বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ বাঙালি রাজনীতির ইতিহাসে একটি বাতিঘর। কাজী আরেফ আহমেদ বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্রান্তি লগ্নে কায়েকটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় বদলকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। ৬০ দশকে যখন জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিল, পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ, ইসলামী জাতীয়তাবাদ, না বাঙালি জাতীয়তাবাদ - কোন পথে যাবে? তখন কাজী আরেফ আহমেদ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন।
যখন প্রশ্ন দেখা দিল, পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার অর্জন, নাকি পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে বাঙালি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা? কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পথে পরিচালিত করতে এগিয়ে যান। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে যখন প্রশ্ন দেখা দিল, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন, নাকি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার গঠন? তখন কাজী আরেফ আহমেদ বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করলেন। বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পরিত্যাগ করে জাসদ গঠন করেছেন। যখন প্রশ্ন দেখা দিলো, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার সামরিক শাসকদের সাজানো বানানো গণতন্ত্র চর্চা হবে, নাকি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসকদের উচ্ছেদ করা হবে? কাজী আরেফ আহমেদ গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসকদের উচ্ছেদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। যখন প্রশ্ন দেখা দিল, জাতীয় ঐক্যের নামে রাজাকারদের মাপ করে দিয়ে রাজাকারদের সাথে মিলেমিশে তথাকথিত শান্তির পথে থাকা, নাকি রাজাকারদের বিচার করা, রাজনীতির মাঠ থেকে উচ্ছেদ করা হবে? কাজী আরেফ আহমেদ মাঠ থেকে উচ্ছেদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের বিশ্বাসঘাতকতা করে খুনি মোস্তাক ও জিয়া যখন স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা শুরু করে তখন কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিরোধকে অমোচনীয় অমীমাংসের রাজনৈতিক বিরোধ হিসেবে চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব বিনির্মাণ করেন এবং অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন।
ইনু বলেন, কাজী আরেফ আহমেদ তার দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি বিপদ। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপদ। রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিরপদ করতে হবে। হাসানুল হক ইনু’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন, মীর হোসাইন আখতার, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, কাজী আরেফ আহমেদের অনুজ কাজী মাসুদ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী প্রমুখ।