রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কৌশলপত্র উদ্বোধন
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের জন্য স্বেচ্ছাসেবামূলক পরিবার পরিকল্পনা সেবা বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউএনএফপিএ এবং সহযোগীদের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিবার পরিকল্পনা কৌশলপত্র উদ্বোধন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) কক্সবাজারে মানবিক বিপর্যয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য গতকাল পরিবার পরিকল্পনা কৌশল ২০২২-২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে। এ সময় রোহিঙ্গা এবং পার্শ¦বর্তী হোস্ট (স্থানীয়) কমিউনিটির নারী এবং মেয়েদের মধ্যে কমিউনিটিভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে সম্পৃক্ততা এবং সেবাকেন্দ্র ভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা সেবার মাধ্যমে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসমূহের চাহিদা বাড়ানোর ওপর একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের নেতৃত্বে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) কারিগরি সহায়তায়, কক্সবাজার হেলথ সেক্টর এবং এসআর এইচ ওয়ার্কিং গ্রুপের অংশগ্রহণে এ কৌশলটি গত বছর অক্টোবরে অনুমোদিত হয়। ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্য খাতের অংশীদাররা ক্যাম্পে অবস্থিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহ এবং নারীবান্ধব সেবা কেন্দ্রগুলোতে যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছেন। গত ৫ বছরে পরিবার পরিকল্পনা সেবার চাহিদা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধুমাত্র ২০১৮-২২ সালের মাঝে স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র সমূহে পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি গ্রহণে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ২০০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি যে শুধুমাত্র সেবা প্রাপ্যতার বিস্তার এবং প্রশিক্ষিত সেবা প্রদানকারীদের জন্য হয়েছে তা নয়, কমিউনিটির মানুষদের মধ্যে এ সেবা সম্পর্কে প্রচারণা, বিশেষত পুরুষের মধ্যে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা দূর করতে বিভিন্ন রকম সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় আসতে ভূমিকা রেখেছে।
স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আশরাফী আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বলেন, সবার জন্য পরিবার পরিকল্পনার সেবাকে আরও সহজপ্রাপ্য, সুলভ, স্বইচ্ছা ভিত্তিক এবং পছন্দসই করার জন্য ২০২২-২৫ এর এই বহু বার্ষিক কৌশল মানবিক কাজে কর্মরত পার্টনারদের দিক নির্দেশনা প্রদান করবে।
এসময় তিনি ইউএনএফপিএ এবং অন্যান্য পার্টনারদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য সাধুবাদ জানিয়ে কৌশলপত্রটি সেবাদানকারী এবং পরিকল্পনাকারীদের মানবিক প্রচেষ্টাকে আর উন্নত করতে লাভজনক উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ মিস ক্রিস্টিন ব্লোখুস বলেন, সরকারের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ পার্টনারশিপে কৌশলপত্র প্রণয়নের কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। কৌশলপত্রটি কমিউনিটির চাহিদা, সেবাকেন্দ্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি পার্টনারশিপ এবং কার্যকারিতা, সক্ষমতা নিশ্চিত করতে অ্যাডভোকেসি এবং সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বআরোপ করে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের মাঝে পরিবার পরিকল্পনার বাড়তি চাহিদা থেকে প্রতীয়মান হয়, স্বেচ্ছায় সেবা গ্রহণ, অধিকারভিত্তিক এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার কৌশলসমূহ তাদের জীবন উন্নত করার কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, মিস গুইন লুইস বৃহৎ পরিসরে নারীদের জন্য সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নারী এবং কিশোরীদের তাদের মৌলিক সামাজিক পরিসেবা প্যাকেজের অংশ হিসেবে পরিবার পরিকল্পনা তথ্য প্রদান করতে হবে। যাতে তারা তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।
পরিবার পরিকল্পনা নারীদের ক্ষমতায়ন করে এবং তাদের পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সহায়তা করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. বশিরুল আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা শাখা) আব্দুস সালাম খান, ডিজিএফপি’র লাইন ডিরেক্টর (সিসিএসডিপি) ডা. নুরুন্নাহার বেগম, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ সচিব) শামসু দৌজা, পরিবার ও পরিকল্পনা কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক ড. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ড. মাহবুবুর রহমান, কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সাইদ রুবাইয়াত, আইপাস এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা। জাতিসংঘের অন্য সংস্থাসমূহের প্রধান এবং প্রতিনিধিরা, উন্নয়ন সহযোগী এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহ (এনজিও) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।