পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন সুপারফুড চিয়া বীজ চাষ করে জেলায় আলোড়ন তৈরি করেছেন হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষক জাহিদুল ইসলাম। এলাকার মানুষের কাছে জাহিদুল আদর্শ কৃষক হিসেবেই পরিচিত। জাহিদুলের মতো অনেকেই এখন চিয়া চাষের স্বপ্ন বুনছেন। কৃষক জাহিদুলের চিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার অনেক কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ বাদ দিয়ে পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন সুপার ফুড চিয়া চাষে ঝুঁকছেন। চিয়া চাষে কৃষকদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নিতিসহ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্রত নিয়েছে এ এলাকার কৃষক। হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বুড়াসারডুবি এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলামের নাম এখন সবার মুখে মুখে। কারণ তার ঝুলিতে রয়েছে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ কৃষকের পুরস্কার। গত বছর কৃষক জাহিদুলের ৩৫ শতাংশ জমিতে চিয়া চাষ করে ভালো ফলন ও লাভ হয়। তাই তিনি এলাকার সব কৃষকদের চিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ভালো ফলন ও লাভের আশায় জাহিদুল এবার প্রায় ১ একর ৫০ শতক জমিতে দানাদার খাদ্য চিয়া চাষ করেছেন। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুপার ফুড চিয়া বীজ সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের ভোজ্য বীজ। এটি মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি এলাকার উদ্ভিদ। চিয়া বীজ দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো। আকারে তিলের মতো সাদা ও কালো রঙের হয়ে থাকে। ১ বিঘা জমিতে চিয়া চাষে সার, বীজ, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ কেজি চিয়া ফলন পাওয়া যায়। প্রতি কেজি চিয়া বীজের বাজার মূল্য ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। জানা গেছে, চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে আ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিয়া বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি আ্যাসিড থাকায় দেহের পাচনতন্ত্র ও মেটাবলিজমের জন্য অনেক উপকারী এই বীজ। এছাড়া পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় কমতে পারে ওজন। এই বীজ ত্বক, নাক ও চুল সুন্দর রাখে ও ক্যান্সার রোধ করে। ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এ বিষয়ে পূর্ব সারডুবী এলাকার কৃষক মনছুর আলী বলেন, কৃষি অফিস ও জাহিদুল ভাইয়ের পরামর্শে প্রথম বারের মতো ৫০ শতক জমিতে চিয়া চাষ করেছি। গত বছর এই জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। এবার তামাকের পরিবর্তে চিয়া চাষ করেছি। ভালো ফলন ও দাম পেলে সামনের বছরে আরও বেশি করে চাষ করব। একই এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, জাহিদুল ভাইয়ের চিয়া চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তামাক চাষের পরিবর্তে এবার ৪০ শতক জমিতে চিয়া চাষ করছি। চিয়া চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জাহিদুল ভাই আমাদের সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছেন। আশা করছি ফলন ভালো হবে। কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, চিয়া বীজ সম্পর্কে টিভিতে একটি প্রতিবেদন দেখি। তারপর হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর ৩৫ শতক জমিতে চিয়া লাগাই। তাতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চিয়ায় বেশি লাভ হয়। সেই থেকে এলাকার কৃষকদের ক্ষতিকর তামাক চাষ বর্জন করে চিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তামাক চাষে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। এ বছর ১ একর ৫০ শতক জমিতে চিয়া চাষ করেছি। এর পাশাপাশি আদা, পেঁয়াজ ও ভুট্টা চাষ করছি। চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে। আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিয়া বীজের বিকল্প নেই। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য তামাক মুক্ত উপজেলা গড়া। তাই তামাকের পরিবর্তে কৃষকদের ভুট্টা ও পুষ্টি সমৃদ্ধ নতুন ফসল চিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, পুরো জেলায় ৮ একর জমিতে চিয়া চাষ হচ্ছে। এটা লাভজনক ভেষজ ফসল। জেলায় গত বছর ৬ একর জমিতে চিয়া চাষ হয়েছিল। লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেকেই চিয়া চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ফসল মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রযুক্তিগত দিক থেকে চিয়া চাষিদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ফসল ফলানো থেকে শুরু করে না ওঠা পর্যন্ত কৃষকের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা পরামর্শ দিচ্ছেন। সূত্র : ইন্টারনেট