প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশে বর্তমানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সব ধরনের রেশনিং ও টিআর-কাবিখা কর্মসূচি চালু থাকার পর দেশে সর্ববৃহৎ মজুত গড়ে রয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে নওগাঁ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, একমাত্র সরকারের দ্বারা কোনোভাবেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারবিষয়ক মৌলিক দক্ষতা ও জ্ঞান সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় মানুষকে ভেজাল খাবার খাওয়ায়। কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবাসায়ী, ভোক্তা সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে বলেও জানান তিনি। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যারা বলেছিলেন, করোনায় দুই লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু একজন লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। এখনো যারা বলছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। তাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে চাই, দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশে বর্তমানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুত রয়েছে। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দুর্ভিক্ষের সুর তুলে একটি মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। আমরা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে চাই, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বর্তমানে দেশে সর্ব বৃহৎ খাদ্যের মজুত রয়েছে। সব ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রয়েছে। এছাড়া সব ধরনের রেশনিং ও টিআর-কাবিখা কর্মসূচি চালু থাকার পর দেশে সর্ববৃহৎ মজুত গড়ে রয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে জাইকার অর্থায়নে দেশের আটটি বিভাগে অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হবে। এছাড়া খাদ্য পরীক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ ল্যাব করে দেবে জাইকা। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এসব ল্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন খাদ্যমন্ত্রী। চাল পলিশ করা বন্ধে আইন করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মানুষের একটা প্রবণতা হলো যত চকচক চাল তত পছন্দ করে। অথচ চকচক করা চালে একমাত্র কার্বোহাইড্রেট ছাড়া আর কিছু নেই। এই চাল খেয়ে হয়তো ক্ষুধা নিবারণ হবে। কিন্তু কোনো পুষ্টি পাওয়া যাবে না। বর্তমানে বাজারে এমন অনেক ধরণের চাল পাওয়া যায় যেগুলো পাঁচবার পর্যন্ত পলিশ করা হয়। এতে চালের উপরের যে আবরণ রয়েছে সেটা ছাঁটাই হয়ে যায়। চালের বহিরাংশেই থাকে মূল পুষ্টি উপাদান। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে বছরে চার কোটি চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। পলিশ করার ফলে চালের ৫ শতাংশ অংশ ছাঁটাই হয়ে যায়। এর ফলে ১৬ লাখ চাল ঘাটতি হয়ে যায়। চালের যে অংশটা ছাঁটাই করে ফেলে দেয়া হয় সেটা মিলাররা ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করে নেয়। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএসএফএ) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (এসটিআইআরসি) প্রকল্পের অধীনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নওগাঁর ১১ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, খাদ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব উত্তম কুমার রায়, জাইকার প্রতিনিধি আসুকা ইয়াসুকা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা চিন্ময় প্রামাণিক প্রমুখ।