ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ছাদে চাষ করা পেঁয়াজ রসুনেই চলে সারা বছর

ছাদে চাষ করা পেঁয়াজ রসুনেই চলে সারা বছর

বাসার ছাদে টবে, ড্রামে, ফলের প্লাস্টিকের বাক্সে ও ইটের হালকা দেওয়ালের মাঝে অর্ধশত প্রজাতির শাকসবজি, মশলা, ফল ও ঔষুধি গাছের বাগান করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের গৌড়দ্বার বাজারের সবুজ মিয়া। সবুজ মিয়া উপজেলার টালকী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত। চাকরির ফাঁকে নিজের বাসার ছাদে প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফুল, ফল, শাকসবজি, মশলা ও ফলের বাগান করেছেন। এ বছর তার ছাদবাগানে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ বেশি করা হয়েছে। সবুজ মিয়ার বাসার ছাদ দেখে মনে হবে, এ যেন পেঁয়াজ রসুনের মাঠ। সরেজমিন দেখা যায়, তার ছাদবাগানে পেঁয়াজ ও রসুনের পাশাপাশি ফলের মধ্যে উন্নত জাতের আম, মালটা, কমলা, ড্রাগন, পেয়ারা, আমড়া ও আপেল কুল এবং সবজির মধ্যে টমেটো, বারোমাসি সীম, মিষ্টি লাউ রয়েছে। সবুজ বলেন, এছাড়া মৌসুম ভেদে ঝিঙা, মরিচ, বারোমাসি মরিচ, করলা, ডাটা, বাঙ্গি ও তরমুজসহ বিভিন্ন শাকসবজি রোপণ করি। ছাদে চাষ করা পেঁয়াজ ও রসুন দিয়েই তার সারা বছর চলে এবং শাকসবজি দিয়ে গড়ে বছরের ৫ থেকে ৬ মাস চলে। তিনি ছাদবাগানে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। জৈব সার হিসেবে চা-পাতা, গোবর, খৈল, কম্পোস্ট ব্যবহার করেন। ফলে তার উৎপাদিত শাকসবজি সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে তিনি জানান। ছাদবাগানের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কারণ হিসেবে জানান, সবুজ মিয়া প্রথমে তার ছাদে কয়েকটি টপে সূর্যমুখী বীজ লাগান। সূর্যমুখীর গাছ ও ফলন দেখে ছাদে শাকসবজিসহ অন্যান্য মশলা, ফল ও ঔষুধি গাছের প্রতি তার আগ্রহ জাগে। এরপর হাইব্রিড মুলার বীজ বপন করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে ছাদবাগান করছি। আমার বাগানে সারা বছর শাকসবজি ও ফুল-ফল থাকে। আমি সারা দিন ছোট্ট একটি চাকরি করি তাই, সারা দিন সময় দিতে পারি না। তবুও বাসার ছাদে উন্নত জাতের আম, মালটা, কমলা, ড্রাগন, পেয়ারা, আমড়া, পেঁপে, আপেল কুল এবং সবজির মধ্যে টমেটো, বারোমাসি সীম, মিষ্টি লাউ, বেগুন, টমেটো, পেঁপে, আমড়া, মরিচ ও অ্যালোভেরা, ঝিঙা, মরিচ, বারোমাসি মরিচ, করলা, ডাটা, বাঙি ও তরমুজসহ বিভিন্ন শাকসবজি, ফুল-ফল রোপণ করে আসছি। অফিসে যাওয়ার আগে ও অফিস থেকে ফিরে বাগানে সময় দিই। গত বছরের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে ৬ মাস চলে সবুজ মিয়ার। এ মৌসুমে পেঁয়াজ বেশি লাগিয়েছি। পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুন লাগিয়েছি। ধারণা করছি প্রায় ১০০ কেজি পেঁয়াজ ও ১০ থেকে ১৫ কেজি রসুন উৎপাদন হবে। এই পেঁয়াজ ও রসুন দিয়েই আমার সংসারের সারা বছর চলবে। আগামীতে পুরো ছাদে বাগান করবেন, এতে বাজারজাত করাও সম্ভব বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন।

তার ছাদবাগানে উৎপাদিত ফুল, ফল ও শাকসবজি একদিকে যেমন নিজের পরিবারের নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে; অন্যদিকে ছাদবাগানের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন ছাদওয়ালা বাসার সবাই। তার সফলতা দেখে ফুলপুরের ব্যাংক এশিয়ার এক কর্মকর্তা, জড়াকান্দার আব্দুল জুব্বার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এক নারী মাঠকর্মীসহ অনেকে আগ্রহী হয়ে তাদের নিজ নিজ ছাদে শাকসবজি চাষ করে সফল হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বর্তমানে শহর ছাড়াও গ্রাম অঞ্চলে অনেকের দালান বাড়ি হচ্ছে। এসব বাড়ির ছাদে শাকসবজি ও উন্নত জাতের ফলের বাগান করতে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, যে জমিটুকুতে বাসা তৈরি করা হয়, ওই বাসার ছাদে নকলার সবুজের মতো সবাই নিরাপদ শাকসবজি ও ফুল, ফলের বাগান করলে এক জমিতেই বাসা ও বাগান হয়ে যায়। এতে আবাসনের পাশাপাাশি জমির উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ফলে জমির সুষ্ঠু ব্যবহারের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটবে ও বাড়তি আয়ের পথ সৃষ্টি হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, সবার ছাদে বাগান স্থাপন করলে ছাদবাগানের পরিচর্যায় শরীর-মন সুস্থ থাকে এবং সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার পাশাপাশি অনেক টাকাও বেঁচে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত