কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থী। তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্যাতনের ওই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করার পাশাপাশি এসব ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাদের বিরুদ্ধে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তবে ঘটনাটি অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন অভিযুক্তরা। উভয় পক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় হল ও প্রশাসনের পক্ষ হতে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার হল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌমিতা আক্তার। তারা উভয়েই দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক। এছাড়া হলের শাখা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকও কমিটিতে আছেন। অন্যদিকে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, কমিটিতে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক ও একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুর্শিদ আলম। কমিটি গঠনের ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। বাদী হয়ে রিট দায়ের করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রিটে বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, হল প্রভোস্ট, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরি অন্তরা ও তাবাসসুমকে বিবাদী করা হয়। আইনজীবী গাজী মো. মহসীন বলেন, ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের (জনস্বার্থ মামলা) আওতায় র্যাগিংয়ের ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট চেয়ে রিট আবেদন করেছি। আইনজীবী গাজী মো. মহসীনের জনস্বার্থে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার নির্দেশনাসহ কয়েকটি আদেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার ৫ ঘণ্টা পর অভিযুক্ত অন্তরা ও তাবাসুমকে ক্যাম্পাসের বাহিরে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে সন্ধ্যা ৬টায় হল প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিটির নির্দেশে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় দুইজন নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে পাবনা (বাসা) থেকে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী। এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে আনা হয়। প্রথমে বেলা সাড়ে ১২টায় হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলার জন্য একটি রুমে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটিও ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে। দুইটি তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে প্রায় ৫ ঘণ্টা কথা বলেন।
প্রথম দিনের তদন্ত শেষে ভুক্তভোগী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ আছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি আমার অভিযোগের বিস্তারিত বর্ণনা চার পৃষ্ঠা লিখিত আকারে নিয়েছে। হলে আমার সঙ্গে যেখানে যা হয়েছে, কমিটির সদস্যরা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। আমি প্রত্যাশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের সঠিক বিচার করবে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘আমরা তদন্ত করেছি। এক দিনে আমরা অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছি। তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি চিঠি দিয়েছি। ঘটনাসংশ্লিষ্ট তথ্য পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আশা করি, সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারব।
এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশে গত রোববার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আ ন ম আবুজর গিফারী, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর শাহাবুব আলম।