ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ফল চাষে সফল রবিউল

ফল চাষে সফল রবিউল

প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করেও অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে বাগানে বিভিন্ন ফলের চাষ করে দারিদ্র্যতাকে জয় করে সফলতার পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জয়পুরহাটের ভারাহুত গ্রামের রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক। পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রাম ঘুরে রবিউলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুটা তরমুজ দিয়ে হলেও পরে একে একে কুল, আম, জামরুল, কমলা, কদবেল, লেবু ও লিচুসহ ৪৬ প্রকারের ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন রবিউল। এ মিশ্র ফলের বাগান থেকে লাখ লাখ টাকার ফল বিক্রি করে শুধু দারিদ্র্যতাকে জয় নয়, এলাকায় সফল বাগানি ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের আব্দুল আলীমের বড় ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫)। ২০০৯ সালে ভালো বেসে বিয়ে করার কারণে কোনো পক্ষই ওই বিয়ে মেনে না নেয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েন রবিউল। জীবিকার তাগিদে ঈশ্বরদীতে একটি দোকানে কাজ করার পর দাদা ডেকে এনে বাড়ির এলাকায় একটি মুদি দোকান করে দেয়। দুর্বৃত্তরা সেই দোকান পুড়ে দিলে অথৈই জলে ভাসতে থাকা রবিউল নানা কাজ করে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে চালাতেন সংসার। এরমধ্যে ২০১৯ সালে ‘এসো’ নামে স্থানীয় একটি বেরসকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ বীজ, মালচিং ও উপকরণ সহায়তা নিয়ে ১৪ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেন। তরমুজের সফলতা পেয়ে রবিউলকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নয় মাসে তিন বারে সাড়ে তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন রবিউল। ২০২০ সালে বর্গা নেয়া আরো দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেন রবিউল। সেখানে সব খরচ বাদে প্রায় ৮ লাখ টাকা লাভ থাকে। পরের বছরও তরমুজ চাষ করে লাভবান হন রবিউল। ২০২১ সালে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন বরইয়ের বাগান পাশাপাশি আরো তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। বাগানে রয়েছে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, কাশ্মীরি আপেল কুল, সিডলেস লেবু, টক-মিষ্টি বাউকুল। এ ছাড়াও রয়েছে দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা, বারি-১ জাতের মাল্টা, কাটিমন আম, ব্যানানা ম্যাংঙ্গো, বারি-৪ আম, গৌড়মতি আম, ব্ল্যাক ম্যাংঙ্গো, আম্রপালি, সূর্য ডিম, থাই সফেদা, মিষ্টি জলপাই, মিষ্টি তেঁতুল, রাম বুটান, লিচু, জামরুল, কদবেল, জামসহ ৪৬ প্রকারের ফল। বাগানে বিভিন্ন গাছে দেখা গেল মনে দোলা দেয়া নানা ফলের সমাহার। বিষমুক্তভাবে ফলের চাষ করতে পোকা দমনের জন্য বাগানে ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ ব্যবহার করা হয়েছে। এক সময় নিজে কর্মচারী হয়ে কাজ করলেও এখন তার বাগানে কাজ করে ৮-১০ জন শ্রমিক। কথা হয় বাগানের শ্রমিক মিন্টু দেবনাথ, সোহাগ ও সিরাজুলের সঙ্গে তারা মাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে বেতন পান যা দিয়ে সংসারের খরচ চালান। ২০২২ সালে তিন লাখ টাকার শুধু বরই বিক্রি করার কথা জানান রবিউল। এরইমধ্যে কাঁটামন জাতের আম ও পেয়ারা এক লাখ টাকা বিক্রি হলেও বাগানে থাকা ফল আরো পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রবিউল। জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে বাগান থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়। রবিউলের সাফল্য দেখে স্থানীয় যুবক মিলন হোসেন ১৫ কাঠা জমিতে পেয়ারা ও বরইয়ের বাগান গড়ে তুলেছেন। এরইমধ্যে ২৫ হাজার টাকার বরই বিক্রি হলেও আরো লাখ টাকার বরই ও পেয়ারা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেন মিলন। পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, প্রথমে তরমুজ চাষ করলেও বর্তমানে রবিউল বিভিন্ন জাতের ফল বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সূত্র : ইন্টারনেট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত