জবিতে ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জবি সংবাদদাতা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীর হাতে একাধিক সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় ওই ছাত্রলীগ কর্মী ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী গাজী মো. শামসুল হুদা। তিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় এবং ৯টার দিকে দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ও রফিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অ্যাকাউন্টিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে এক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দিতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী গাজী এক শিক্ষকের গায়ের উপর এসে পড়ে। তখন কর্তব্যরত এক সাংবাদিক তাকে পরিচয় জানতে চেয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিককে মারতে উদ্যত হয়। পরবর্তীতে কামরুল হাসান রিপন ও অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সবাইকে সরিয়ে দেন।
পরে বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজীকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য অভিযুক্ত গাজী ও তার নেতাকর্মীদের পাঠান। কিন্তু সমঝোতা করতে এসে গাজী এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম আবর্তনের ফজলে রাব্বিসহ আরও একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী গাজী মো. শামসুল হুদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটা মিউচুয়াল হয়ে গেছে।’ এসময় গালাগালির কোনো ভিডিও থাকলে সেটা দিয়ে কি করতে পারবা বলে বারবার প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নির্দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবর্ণ আসসাইফ বলেন, প্রথমে ঘটনা ঘটার পর, আমি আমার দায়িত্বশীল জায়গা থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজিকে ফোন দিয়ে জানাই। তিনি জানান বিষয়টি দেখছেন। এর ৫-১০ মিমিট পর গাজী এসে আবারও ওই সহকর্মীসহ অন্য সহকর্মীদের গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করে। আমার কথা হলো একজন সভাপতি নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা এমন ব্যবহার কিভাবে করে। আমাদের মনে প্রশ্ন তৈরিই হয় তিনিই এমন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে কি না। এবিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘আমি বিষয়টা শুনেছি। অ্যাকাউন্টিং বিভাগের প্রোগ্রামে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটেছিল। পরে ঘটনাটি মিটমাট করতে গেছিল। কিন্তু এরকম বাজে মন্তব্য সে যদি করে থাকে তাহলে আমি নিজে এর বিচার করব এবং ব্যবস্থা নিব।’
এ বিষয়ে জবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান বলেন, ‘এরকম ঘটনা একবার নয়, ইব্রাহীমণ্ডআকতার কমিটি আসার পর বার বার ঘটতেছে। এ ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সবচেয়ে বড় বিষয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে অবগত করার পরেও তিনি তার কর্মীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আমরা আশা করব, সাংগঠনিকভাবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। দুইজন সহকারী প্রক্টরকে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলাম। এ ধরনের কাজ কখনোই সমীচীন নয়। লিখিত অভিযোগ দিলে, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান বলেন, ‘এমন কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাকিম ফারুকী ও সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসানের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্তা ও মারধরের ঘটনা ঘটে চলেছে। বারবার ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার পরিবেশকে বিঘিœত করছে।