ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা প্রণয়ন

ঈদ-পূজার আগে-পরে মহাসড়কে ১০ দিন বাইক নিষিদ্ধের প্রস্তাব

ঈদ-পূজার আগে-পরে মহাসড়কে ১০ দিন বাইক নিষিদ্ধের প্রস্তাব

সারা দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার দ্রুত রাড়ছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্বল্প দূরত্বের বাহনটি এখন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কেও চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ‘খসড়া মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা’ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার মতো পার্বণের আগে-পরে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। এ ছাড়া মহাসড়কে মোটরসাইকেল আরোহী বহন এবং ১২৬ সিসি ইঞ্জিনের নিচে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

খসড়াটি শিগগিরই অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, নীতিমালটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে। এতে নীতিমালার বিভিন্ন ধারা-উপধারায় পরিবর্তন আসতে পারে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপনের সময় মহাসড়কে দূরপাল্লার যাত্রায় মোটরসাইকেলের চলাচল বহুগুণে বেড়ে যায়। এতে মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি হয়। অধিকাংশ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়ে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের উদ্দেশ্য থাকলেও বর্তমানে তা মহাসড়কসহ সর্বত্র চলাচল করতে দেখা যায়।

এতে বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মনোভাব, গতি বাড়ানোর প্রবণতা, মোটরসাইকেলের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা না থাকা, আইন পালনে অনীহা, মোবাইল ফোন ব্যবহার ইত্যাদিকে মোটরসাইকেলজনিত দুর্ঘটনা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ কারণে সড়ক নিরাপত্তার উন্নতির জন্য মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

তিন অধ্যায়ের এই নীতিমালার উদ্দেশ্য হলো, মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা; মোটরসাইকেলের নিরাপদ ব্যবহার ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা এবং মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।

এসব লক্ষ্য অর্জনে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের (স্পোর্টিং মোটরসাইকেল) কমানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গতির মোটরসাইকেল (স্কুটি মোটরসাইকেল) বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

নীতিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬ নম্বর ধারায় ‘মোটরসাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ’-এর কথা বলা হয়েছে। ১৪টি উপধারার মধ্যে দুটিতে বলা আছে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা ইত্যাদি পার্বণকালীন আগে ও পরে মোট ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। মহাসড়কে সর্বনিম্ন ১২৬ সিসি ইঞ্জিন বা সমতুল্য ক্ষমতার (‘ল’ সিরিজ) মোটরাইকেল চলাচল করতে পারবে অর্থাৎ মহাসড়কে ১২৬ সিসি ইঞ্জিন বা সমতুল্য ক্ষমতার চেয়ে নিম্ন ক্ষমতার কোনো মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

অন্য উপধারায় বলা হয়েছে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালনাকালে চালক কোনো আরোহী বহন করতে পারবে না। চালককে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি (চেস্ট গার্ড, নি গার্ড, এলবো গার্ড, গোড়ালি ঢাকা জুতা বা কেডস, সম্পূর্ণ আঙুল ঢাকা গ্লভস এবং ফুলপ্যান্ট, ফুল শার্ট) ব্যবহার করতে হবে। হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র (ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন সনদ, ট্যাক্স-টোকেন ইত্যাদি) এবং রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। নীতিমালায় আরও উল্লেখ আছে, মোটরসাইকেল চালনাকালে চালক ও আরোহী উভয়কেই সঠিকভাবে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত হেলমেট পরতে হবে।

মহাসড়কে চলাচলের জন্য মোটরসাইকেলে এবিএস (এনটি লক ব্রেকিং সিস্টেম) থাকতে হবে। মোটরসাইকেল বাঁ লেনে চালাতে হবে। মোটরসাইকেল ফুটপাতে চালানো যাবে না। বৃষ্টির সময় অতি সহজে থামানো যায়, এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীরগতিতে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। মোটরসাইকেল চালনাকালে হঠাৎ গতি বাড়ানো, থামানো বা দ্রুত মোড় নেয়া যাবে না। কুয়াশায় লো-বিম বা ডিপার জ্বালিয়ে সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীরগতিতে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। দৃষ্টিসীমা বেশি মাত্রায় কমে গেলে বা একেবারেই দেখা না গেলে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালনাকালে নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলতে হবে। রাতে মোটরসাইকেল চালনাকালে রেট্রোরিফ্লেক্টিভ জ্যাকেট ব্যবহার করতে হবে এবং মোটরসাইকেল চালনাকালে ফার্স্ট এইড কিট বহন করতে হবে।

মোটরসাইকেলজনিত দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা হ্রাসে এই নীতিমালা কতটা ভূমিকা রাখবে, জানতে চাইলে রোড সেফটির নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান জানান, ‘নীতিমালাটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমবে। তবে এতে কিছু ভালো দিকের পাশাপাশি অনেকগুলো অযৌক্তিক বিষয় আছে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা না আনতে পারলে কেবল বাইকের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ করে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।’ তার মতে, নীতিমালা করলেই হবে না, সেটি সঠিক ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে নজরদারি বাড়াতে হবে, বিশেষ করে রাতে। রাতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটলেও তা বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারছে না পুলিশ। নিরাপদ সড়ক আইনের সঠিক বাস্তবায়ন তো হচ্ছে না, সেটি করতে হবে। সড়কের অন্যগুলোকে বাইরে রেখে কেবল মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করলে তা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি ঘটবে না। ২০২২ সালের ১২ মে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদযাত্রায় দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত এবং ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৪৪ জন। দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট যানবাহনের ৩৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্র, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ অটোরিকশা, ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল এবং ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু চালুর পর গেল বছরের ঈদযাত্রায় ৭ থেকে ১৩ জুলাই সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত