ডিএমটিসিএল

এডিবির কাছে চাওয়া হলো অতিরিক্ত ৩০ কোটি ডলার

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোরেলের লাইন-৫ নির্মাণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছে আরও ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) ডলার চায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। দেশের প্রথম মেট্রোরেলের গাবতলী থেকে দানেশকান্দি (এমআরটি-৫ সাউদার্ন রুট) পর্যন্ত অংশ নির্মাণে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২৫০ কোটি) মার্কিন ডলার অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে এডিবি।

যদিও এ প্রকল্পে সরকার বিনিয়োগ চায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এজন্য এডিবির কাছে আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের অনুরোধ করেছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। বাকি ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করতে চায় সরকার।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এমআরটি-৫ (সাউদার্ন) এর দ্বিতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য জানায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর ঝিয়াংগু মেইনের কাছে প্রতিশ্রুত অর্থের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের অনুরোধের বিষয়টি জানান সড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী ও ডিএমটিসিএল এমডি এমএন সিদ্দিক।

ডিএমটিসিএল এমডি এমএন সিদ্দিক বলেন, এবিডি এই প্রথম মেট্রোরেলের কোনও প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে। এ প্রকল্পে এডিবির কাছে অনুরোধ, তাদের বিনিয়োগ আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন তারা বাড়ায়। এডিবির জন্য এটি বড় কোনো অর্থ নয়। আশা করি, এডিবি তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

এডিবিকে অতিরিক্ত অর্থ অর্থায়ন করতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, এডিবি বর্তমানে যা অর্থ দিচ্ছে, তার থেকে অল্প কিছু বেশি দিলে পুরো প্রকল্প এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে।

এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে পাতাল ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। এতে মোট ১৬টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি পাতাল এবং চারটি উড়াল।

স্টেশনগুলো হলো- গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরঝিল পশ্চিম, নিকেতন, রামপুরা, আফতাবনগর পশ্চিম, আফতাবনগর মধ্য, আফতাবনগর পূর্ব, দাশেরকান্দি। স্টেশনের নাম সমন্বয় করা এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে এমএন সিদ্দিক বলেন, আমরা এখন বিনিয়োগে যাব। মেট্রোরেলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না, যানজটে কমে আসবে, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এবিডির অর্থায়নে এই প্রথম মেট্রোরেলের কোনো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে। এ প্রকল্পে এডিবির কাছে অনুরোধ তাদের বিনিয়োগ আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন তারা বাড়ায়। আশা করি, এডিবি তাদের সহায়তা অব্যাবহ রাখবে।

এ অনুষ্ঠান শেষে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বিএম আমিন উল্লাহ নুরী সাংবাদিকদের জানান, মেট্রোরেল (এমআরটি-১ লাইন) প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে পূর্বাচলে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ের (তিনশ ফিট) তেমন ক্ষতি হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘যেকোনো কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা হয়। মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে পূর্বাচল তিনশ ফিটের তেমন ক্ষতি হবে না। সামান্য ক্ষতি হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের এলাকায় কারও জমি নেয়া হলে, কারও ভবন বা বাড়ি ভাঙা পড়লে তার জন্য অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। তার আগে কতটুকু ক্ষতি হবে আমরা তা স্টাডি করি।’

তিনি বলেন, ‘রাস্তার সামান্য ক্ষতি হবে। যে জায়গায় কাজ হবে সেখানে ব্যারিকেড দেয়া হবে। রাস্তার কিছু অংশ ভাঙা পড়বে। এটাকে রাস্তা কাটা বলা যাবে না।’

বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘৩০০ ফিট রাস্তার দুই দিকে লাইট লাগিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে লাইট লাগানো হয়নি। আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের কারণে এটি করা হয়েছে। মাঝখান দিয়ে মেট্রোরেলের লাইন যাবে বলেই ওখানে লাইট লাগানো হয়নি।’

ওই এলাকার ১২টি আন্ডারপাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সমন্বয় করেছি। শতভাগ অক্ষত রাখা যাবে না। সামান্য অংশে ক্ষতি হবে। কাজ শুরু হলেই দেখা যাবে কতটা ভাঙা হচ্ছে। কয়টা আন্ডারপাস ভাঙা হবে তা নিয়ে বসতে হবে।’ কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) সড়ক নির্মাণ করেছে রাজউক। ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালে শুরু হয়। এর সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এ বছর প্রকল্পটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি-১ লাইন) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীনে বাস্তবায়ন হতে চলা প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ মাটির নিচে নির্মিত হবে। এ পাতালরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। জাপানি ঋণ ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।