ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চা এখন বিলাসিতা বটে!

চা এখন বিলাসিতা বটে!

গরিবের আপ্যায়ন চায়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে মেহমানদারি। ক্ষণে ক্ষণে যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস তাদের জন্য এখন দুঃসময়। সহজেই এখন আর বলা যাচ্ছে না ‘ চলেন এক কাপ চা খাই’। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে ধূমায়িত এক কাপ চা খেতে খেতে প্রয়োজনীয় অনেক আলোচনা করা এখন সম্ভব হয়ে উঠেছে না। কাউকে মোবাইল ফোনে অপেক্ষা করার কথা বলতে গিয়ে ‘এক কাপ চা খান’ আমি এসে যাচ্ছি এই সংলাপটি এখন তেমন আর শোনা যাচ্ছে না। অতিথি আপ্যায়নে এই ভাটা নিয়ে দোকানিরা বলছেন, চা পাতা, চিনি ও দুধের দাম বেড়ে গেছে। ফুটপাতে দোকান করতে গেলে কাউকে না কাউকে ‘খুশি’ রাখতে হয়। কোনো কোনো ‘খুশি’ দৈনিক ভিত্তিতে আবার কোনো কোনো ‘খুশি’ মাসিক ভিত্তিতে। এলাকার সন্ত্রাসী কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে দোকান করার সুযোগ পেতে এই ‘খুশি’ বাণিজ্য রপ্ত করতে না পারলে দোকান করা কঠিন। ‘খুশি’ করার জন্য একটা চা দোকানকে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। এই টাকা জোগাড় করা হয় চায়ের দাম বাড়িয়ে। ফলাফল হচ্ছে ক্রেতার পকেট কাটা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যারা ঘরের বাইরে থাকেন, তারা দৈনিক অন্তত চার থেকে পাঁচ কাপ চা খান। তার দাম নিদেন পক্ষে ৫০ টাকা। তবে ফুটপাতের পরিচ্ছন্ন দোকানে চায়ের দাম ২০ টাকা পর্যন্ত। গরম পানিতে গুঁড়া দুধ গুলিয়ে গরুর ‘খাঁটি’ দুধ বলে চালিয়ে দেয়ার নামে বাড়তি দাম নেয়ার অভিযোগও কম নয়। ‘গরুর’ দুধের চায়ের দাম তুলনামূলক বেশি। সেই সঙ্গে কনডেন্স দুধের চা তো রয়েছে। রয়েছে নানা ধরনের মশলার চা। লেবু, আদা, কালিজিরা দিয়ে চায়ের পাশাপাশি রয়েছে গুড়ের চা, ‘তেঁতুল চা, ‘মরিচ চা, ‘মালটার চা’। গুঁড়ো দুধের চা, গরুর দুধের চা, কনডেন্স মিল্কের চায়ের দামে হরেক রকম ফের। তারপরও মানুষ খাচ্ছে। উপায় নেই, অভ্যাস হয়ে গেছে। চায়ের সঙ্গে যারা সিগারেট কিংবা পান খান তাদের দৈনিক খরচ প্রায় ৩০০ টাকা। মাসে দাঁড়ায় ৯ হাজার টাকা। কোনো কোনো অফিস বা কারখানায় একজন অফিস সহায়ক পর্যায়ের কর্মীর বেতন ৯ হাজার টাকা। তাহলে অভ্যাসের খেসারত দিতে গিয়ে একজন মানুষ যদি মাসে ৯ হাজার টাকা খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় করেন তাহলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যান্য খাবার কিনতে তার মাসিক খরচ কত পড়ে সেটা সীমিত আয়ের লোকজন হাড়ে হাড়ে অনুভব করেন। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতিতে অনেকে ‘অভ্যাসগত’ খরচ কমাতে গিয়ে চা পান সীমিত করছেন। ফলে এখন আর চট করে কাউকে বলা যাচ্ছে না চলেন চা খেতে খেতে কথা বলি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত