ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম এটা সঠিক তথ্য নয় : সিইসি

কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম এটা সঠিক তথ্য নয় : সিইসি

দেশে বর্তমানে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এসব ভোটার আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। হালনাগাদে মোট ভোটার যুক্ত এবং মৃত ভোটার কর্তনের পরও ভোটার বেড়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের সামনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি জানান, ২০২২ সালের ২ মার্চ ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০। ২০২২ সালে হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯ জন। আর মৃত ভোটার কর্তন করা হয়েছে ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জন। অর্থাৎ, বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা দাঁড়াল ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।

তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। এবার ভোটার বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। মোট ভোটার বেড়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ জন। ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে সিইসি, অন্য কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোটার দিবস উপলক্ষে একটি র‌্যালির আয়োজন করেন, যা নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে শুরু করে আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারো নির্বাচন ভবনে গিয়ে শেষ হয়।

গত বছরের ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চার ধাপে তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করে ইসি। হালনাগাদের খসড়া তালিকা পূর্ব ঘোষিত সময় (১৫ জানুয়ারি) অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়। এটি বিভিন্ন জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে টানিয়ে দেয়া হয়েছে, যেন কারো কোনো ভুল থাকলে আবেদন সংশোধনের সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে দাবি, আপত্তি বা সংশোধনের আবেদন করার শেষ সময় ৩১ জানুয়ারি। অর্থাৎ দাবি, আপত্তি বা সংশোধনের জন্য সময় ছিল ১৬ দিন। সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন নিষ্পত্তির পর হালনাগাদ করা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, যা আগেরবারের চেয়ে ২৬ কোটি টাকা বেশি। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালানাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০, ২০১২-২০১৩, ২০১৫-২০১৬, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।

এ বছরের ১৫ জানুয়ারি খসড়া তালিকার ভোটারসহ মোট ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১১২ জন ও নারী ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭৭ হাজার ২০৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ ৮৩৭ জন।

পরে রিভাইজিং অথরিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর অন্তর্ভুক্ত হয় ৯০ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ৬১২ এবং নারী ২৭ হাজার ৬৭০ জন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি; ভোটার সংখ্যা তার ৭০ শতাংশ।

ছবিসহ ভোটার তালিকা চালুর ১৫ বছরে ভোটার বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। ছবিসহ ভোটার তালিকার পর নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮ কোটি ১০ লাখ; দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১১ লাখ, একাদশ সংসদে ১০ কোটি ৪১ লাখ। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ ভোটার হতে যাচ্ছে।

এর আগে গতকাল সকালে ভোটার দিবসের উদ্বোধনের সময় সিইসি বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে এটা সঠিক তথ্য নয়। তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা এরই মধ্যে জানিয়েছেন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।

সার্বিকভাবে মোটেই কম হয়নি। এটা সঠিক তথ্য নয়। কিছু কিছু ভোটে ভোটার উপস্থিতি কেন কম হয়েছে, আমাদের পক্ষ থেকে কমিশনার মো. আলমগীর এবং আহসান হাবিব খান বলেছেন।’

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট নিয়ে সিইসি বলেন, আমরা যেটা অনুমান করেছি, বাস্তবতার নিরিখে, ভোট যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, ব্যাপকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, তখন ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকে। আপনারা ইউনিয়ন কাউন্সিলর ভোট দেখেছেন সেখানে কিন্তু উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল এবং ইভিএমে হয়েছে। ইভিএমে ভোটে বলা হয় ধীরগতি, সেখানেও উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল। আমরা আশাকরি আগামীতে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সেখানে উপস্থিতি যথার্থ হবে। জেলা পরিষদে আমাদের উপস্থিতি ছিল ৯৯ শতাংশ, সেখানে ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে ভোট হয়েছে।

সিইসি বলেন, বিভিন্ন কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। আবহাওয়াগত কারণ হতে পারে, দুর্যোগের কারণে হতে পারে, শীতের কারণে হতে পারে; বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ, ভোটাররা এসেছেন কি না তাদের বাধা দেয়া হয়েছে কি না? তারা ভোট দিতে পেরেছেন কিনা সেটাই বিশেষভাবে পরিধানযোগ্য আমাদের কাছে।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব হচ্ছে প্রথমত ভোটারের নিজের। রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি হয় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল একটা দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে সে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন, আমরা ভোটটা আয়োজন করব। আমরা আপনাদের ব্যালট পেপার সাপ্লাই করবো, বক্স সাপ্লাই করবো এবং আমরা আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সংস্থাগুলো আছে তাদের স্ট্রিকলি বলে থাকি আপনারা ভোটকেন্দ্রের চারপাশে প্রত্যাশিত যে আইনশৃঙ্খলা এবং অনুকূল পরিবেশ, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। তাই দায়িত্বটি কার? দায়িত্বটি সামগ্রিক সমন্বয়ের। এটা আপনাদের অনুধাবন করতে হবে। এককভাবে এই দায়িত্ব কখনোই নির্বাচন কমিশনের নয়।

আগামী ভোট ১৪ আর ১৮ সালের মতো হবে না, আপনারা কেন এত আশাবাদী এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ওই সব প্রশ্নে আমি কোনো মন্তব্য করব না। ১৮ এবং ১৪ সালে কী হয়েছে, সেগুলো আমরা দেখব না। আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি। আমাদের জন্য আপনাদের শুভ কামনা রাখবেন, যেন আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা আগামীতে সূচারুরুপে পালন করতে পারি।

দলগুলো কী ভোটের দিকে এগুচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা আগেও বলেছি, তাদের প্রতি আমরা বারবার আবেদন জানাচ্ছি আপনারা আসুন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আপনাদের মধ্যে যদি মত-পার্থক্য থাকে, সেটা আপনারা নিরসন করার চেষ্টা করুন। কারণ নির্বাচন কমিশন মুরুব্বিআনা করতে পারবে না। কিন্তু আমরা বিনীতভাবে সব রাজনৈতিক দলকে বলব, আপনারা যে কোনো প্রকারেই হোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভারসাম্য সৃষ্টি করুন। যাতে এই ভারসাম্যের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে এক ধরনের নিরপেক্ষতা এবং যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত