ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন

ভিসি ছুটিতে : বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন খামবন্দি

ভিসি ছুটিতে : বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন খামবন্দি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রার দপ্তরে সিলগালা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচ দিন হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় হাইকোর্ট নড়েচড়ে বসলে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোনো হেলদুল।

জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্যর অডিও ফাঁস হওয়ার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ছুটিতে যান। তিনি না থাকায় খামবন্দি প্রতিবেদনটি এখনো ওই অবস্থায় রেজিস্ট্রার দপ্তরে পড়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক ঘটনা ঘটায় আগ বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে পিছিয়ে আসে। হাইকোর্ট যে আদেশ দেয়, সেটা পালন করে নিজেরা ছাত্রলীগের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে চায়। এই ঘটনায় ছাত্রলীগকে বাঁচাতে ঘটনার শুরুতে কয়েকজন শিক্ষক কাজও করেছিলেন। ঘটনা আলোচিত হওয়ায় তারা পিছিয়ে আসে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অনুপস্থিতে উপ-উপাচার্যকে রুটিন করে সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি চাইলেই উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

এদিকে একই ঘটনায় সত্যতা পেয়ে হল বডি অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে সিট বাতিল করে। হাইকোর্টও এ ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কারের কথা বলেছে আরও কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের প্রতিক্রিয়া ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘সাময়িক না, আমি চাই তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক। মামলার বিষয়ে আমি ফ্যামিলির সঙ্গে কথা বলছি। মামলা তো আমি করবোই। যেহেতু আমি দোষী না, তাই আমি তো মামলা করব-ই।’

হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দীন খান গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতেই হলো। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া। সেই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জন্য একটা অনন্য নজির তৈরি হলো। প্রশাসন যে ব্যর্থ এটা আমরা এতদিন মুখে বলে আসছি। কিন্তু হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের মধ্যদিয়ে এটা প্রমাণিত হলো আসলই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য ছুটিতে থাকায় ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন খামবন্দি অবস্থায় আছে। তিনি না ফেরা পর্যন্ত প্রতিবেদনটি সিলগালা অবস্থায় থাকবে। তিনি আসলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‘

তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা পালন করেছি। আগামীকাল দুপুর ১২টায় শৃঙ্খলা কমিটি মিটিং ডেকেছে।

ওই কমিটির প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাই আমরা চাইলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নবীন এক ছাত্রীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত