নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকায় ৪৫ একর (১৩৫ বিঘা) জমিতে ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে তার গড়ে তোলা মিশ্র ফলবাগান এলাকায় এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে। বাগানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন তিনি। সোহেল রানা এবার তার খামারে চাষ করেছেন ‘গাডিওলাস’ ফুল। জানা যায়, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বছরব্যাপী নিরাপদ উচ্চমূল্যের ফসল ও চারা উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তার কৃষি খামারে ২৫ শতক জমির ওপর স্থাপন করা হয়েছে একটি পলিনেট হাউজ। এই পলিনেট হাউজের ৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ‘গ্লাডিওলাস’ ফুল চাষ শুরু করেছেন তিনি। রোপণের দুই মাসের মাথায় ফুটতে শুরু করেছে ফুল। জেলায় ‘গাডিওলাস’ হতে পারে সম্ভাবনার নতুন এক ফসল। উপার্জনের নতুন এক উপায়। আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান। চারিদিকে মৌ মৌ ঘ্রাণ। এরই পাশেই একটি পলিনেট হাউজে লাল, সাদা, গোলাপি, বেগুনী, কমলা, হলুদসহ নানা রঙের ফুলে চোখ আটকে যাবে যে কারো। নজরকাড়া রূপে আপন মনে ফুটে আছে ‘গ্লাডিওলাস’। নতুন মাটিতে পরীক্ষামূলক চাষের এক সফল প্রকাশ। এ বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, স্থানীয় বাজারে ‘গ্লাডিওলাস’ চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও দর্শনার্থীরা আমার এই বাগানে ঘুরতে আসে। তারাও মুগ্ধ হয়ে পছন্দমত ফুল কিনে নিয়ে যেতে পারবে। সেই চিন্তা থেকেই বাড়তি আয়ের আশায় যশোর থেকে ১৫শ পিস কন্দ (বাল্ব) কিনে ৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ করেছি। রোপণের দুই মাসের মাথায় ফুটতে শুরু করেছে ফুল। তিনি বলেন, ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ আবহাওয়া এই অঞ্চলের জন্য বেশ উপযোগী। এই ফুল চাষে অন্যান্য ফসলের মত খুব বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। জৈব সার দিয়ে আলু চাষের মত মাটি ঝরঝরে করে নিয়ে বেড করে নিয়ে কন্দ (বাল্ব) লাগাতে হয়। এরপর সেচ দিলে চারা বের হয়। কন্দ (বাল্ব) রোপণের মাত্র ২ মাসেই ফুল ফুটতে শুরু করে। এরপর স্টিক কেটে বাজারে বিক্রি করা যায়। বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্টিক ১০-১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অঞ্চলে ‘গ্লাডিওলাস’ চাষের সম্ভাবনা আছে। এতে করে স্থানীয় চাহিদা মেটানো যাবে ও ভালো টাকা আয় করা যাবে। সোহেল রানা বলেন, বর্তমানে তার বাগানে ৪ হাজারের মত কন্দ (বাল্ব) আছে। আরও বড় পরিসরে ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ করবেন। এই ফুল চাষে কেউ আগ্রহী হলে তার খামার থেকে কন্দ (বাল্ব) চারা কিনে নিয়ে গিয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শে চাষ করতে পারবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কমবেশি সব জায়গাতেই ‘গাডিওলাস’ চাষ হচ্ছে। আমাদের নওগাঁ জেলাতেও ‘গ্লাডিওলাস’ চাষের দারুণ সম্ভাবনা আছে। হতে পারে এই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে নতুন একটি ফসল ও লাভজনক চাষ। তিনি বলেন, নতুন নতুন ফসল চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নতুন যেসব উদ্যোক্তা হচ্ছে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ ধীরে ধীরে জেলায় সম্প্রসারিত হবে এবং স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।