জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে মোমেন

দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে সহায়তা করুন

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করার জন্য জি-২০সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান সমগ্র অঞ্চলজুড়ে বিপর্যয়ের পাশাপাশি ব্যাপক নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে এবং তারা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রবাদিতায় অনুপ্রাণিত ও নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যে পরিণত হতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সভাপতিত্বে শুক্রবার নয়াদিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের এক অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন

মোমেন বলেছেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার পাশাপাশি, জীবন বাঁচাতে এবং মানবিক সংকটে জনগণকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি কোভিড-১৯ এর কঠিন সময়ে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের প্রতি বাংলাদেশের সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

অধিবেশন শুরু হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রেকর্ড করা ভিডিও ভাষণ দিয়ে। বাংলাদেশসহ বিশেষভাবে আমন্ত্রিত নয়টি দেশ এবং ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ৪০টিরও বেশি প্রতিনিধি দল বর্ণাঢ্য সম্মেলনে যোগ দেন।

এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। ভারত গত ডিসেম্বরে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পেয়েছে।

সন্ত্রাসবাদকে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, চ্যালেঞ্জ শুধু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য নয়, মানব নিরাপত্তার জন্যও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি বজায় রেখেছে।

তিনি বলেন, আমরা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাংলাদেশের মাটি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ দিই না। আমাদের সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের কারণে ভারত, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারত বর্তমানে অব্যাহত উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা সুবিধা ভোগ করছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকট বিভিন্ন দেশের অনেকের জন্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় ব্যাঘাতের কারণে অনেক সরকারই মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে।

মন্ত্রী জি-২০ সভাপতি হিসাবে ভারতকে বিভিন্ন সংকটের অবসান এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য জি-২০ নেতাদের প্রভাবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সংকট বিবেচনা করে, জি-২০ নেতৃত্বের উচিত সংকটের কারণে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লাভের কমপক্ষে ২০% সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ বাধ্যতামূলক করা।

জি-২০ সম্মেলনে পৃথক অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময়, মোমেন ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাড়া দেয়ার লক্ষ্যে একটি সর্বজনীন, নিয়মভিত্তিক, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, পূর্বাভাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন এবং ন্যায়সংগত বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংকট এরই মধ্যে বহুপক্ষীয় সমাধানের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে এবং এই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে আমরা এই লক্ষ্যে আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই গ্রহটিকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গোষ্ঠী জি-২০ দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদান করার বিষয়ে জি-২০ নেতৃত্বকে প্রভাবিত করার জন্য জি-২০ প্রেসিডেন্সিকে অনুরোধ জানান।

তিনি ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, বিষয়টি জি-২০সহ সব বহুপক্ষীয় উদ্যোগের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত।

এই প্রসঙ্গে, তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের একটি প্রধান দেশ হিসেবে এবং জি-২০ সভাপতি হিসেবে ভারত জি-২০ নেতৃত্বকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন করার অনুরোধ করতে পারে। বৈশ্বিক শান্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থবহ বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদারে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত শান্তি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি, জি-২০সহ সব বহুপক্ষীয় ফোরাম এবং উদ্যোগের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমাদের পথনির্দেশ করে চলেছে। মন্ত্রী জি-২০-তে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা ও উষ্ণতাকে প্রতিফলিত করে। দুটি পৃথক অধিবেশনে জি-২০ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও বক্তব্য রাখেন।