ইবির পছন্দের হলে ফুলপরী

‘আর যেন না ঘটে এমন ঘটনা’ পাঁচজনের বহিষ্কারাদেশ বহাল

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইবি প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনকে তার পছন্দমতো যে কোনো হলে আবাসিকতার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নিজের পছন্দে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠেছেন ফুলপরী।

১ মার্চ বিচারপতি জেবিএম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ফুলপরীর পছন্দসই হলে আবাসিকতা দেয়ার নির্দেশ দেন।

গতকাল বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ফুলপরীকে শেখ হাসিনা হল থেকে স্থানান্তরিত করে তার পছন্দমতো বঙ্গমাতা হলের বকুল ব্লকের ৫০১ রুমে তুলে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান।

এর আগে গতকাল সকালে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে ফেরেন ফুলপরী। প্রথমে পাবনা পুলিশ ফুলপরীকে তার বাসা থেকে পাবনা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। পরে শিলাইদহ ঘাট থেকে সহকারী প্রক্টর শাহবুব আলম, ইবি থানার পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়।

ক্যাম্পাসে আসার পর ফুলপরীকে পুলিশি নিরাপত্তায় প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তিনি প্রক্টরের কাছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এসে ফুলপরী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন। আমরা ওই হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি, তাকে সেই হলে আবাসিকতা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে ফুলপরী বলেন, ‘আমি আমার পছন্দমতো বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে ভালো অনুভব করছি। অন্যায়ের প্রতিবাদে দেশবাসী আমার পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমি পড়াশুনা করে, দেশের উন্নয়ন করব। আমার সঙ্গেন ঘটনা ঘটেছে তা যেন আর কারো সঙ্গে না ঘটে এ বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’

এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ফুলপরীর হল আবাসিকতার আবেদনপত্র ও হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়েছি। ফুলপরী যেহেতু আমাদের এই হল পছন্দ করেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা তাকে তার পছন্দসই রুমে আবাসিকতা প্রদান করেছি।

এদিকে ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্রের ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার এবং ৭ দিনের মধ্যে কেনো তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সেই মর্মে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সভাকক্ষে উপাচার্যের সভাপতিত্বে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ড. আমানুর আমান। শৃঙ্খলা মিটিং শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিটিংয়ে প্রত্যেক সদস্যের মতানুসারে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।