বিএনপির পদযাত্রায় ফখরুল

তামাশার নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের মতো ‘তামাশা’র নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব থানার আউয়াল এভিনিউ সড়কে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকাসহ সব মহানগরের থানায় থানায় একই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে, তারা গত দুটি নির্বাচন যেভাবে করেছে, এবারো ওইভাবে নির্বাচন করবে। আবারো সেইভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ লুট নিয়ে যাবে।

কিন্তু মানুষ এটা হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে, রাজপথে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এবার আমরা আর কোনো সেই তামাশার নির্বাচন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন হতে দেব না, এদেশের মানুষ হতে দেবে না। নেতাকর্মীর উদ্দেশে আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমাদের এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন সমগ্র মানুষের যে কথা বলার অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন।

১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছি, পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব। আমরা শান্তির সঙ্গে আন্দোলন করছি, শান্তির সঙ্গে এই আন্দোলনে থাকব। আমাদের বাধা দিলে সেই বাধা অবশ্যই আমরা অতিক্রম করে যাব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এই জনগণ বাধা প্রতিরোধ করবেই করবে।

এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য, বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। উত্তরা থানা বিএনপির উদ্যোগে উত্তরা পাবলিক কলেজের সামনের সড়কে দুপুরে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা সমবেত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচন মানুষ ভোট দিতে পারে নাই, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আবার এই সরকার একটা পাতানো নির্বাচন, সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে। তারা বার বার বলেছে, ভোট হবে এই সরকারের অধীনে। এই সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে ভোট কখনো নিরপেক্ষ হতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এদেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তবেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমেই জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের’ দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। এছাড়া প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ফলাফল নিয়ে সরকারের ‘অদক্ষতার’ কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবি : মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ অসংখ্য নেতা এখনো কারাগারে আছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ‘গুম’ করে দেয়া হয়েছিল। পরে তাকে ভারতে পাওয়া যায়। সেখানে মামলায় কারাবরণ করেন তিনি। সেখানকার আদালত তাকে মুক্ত করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা রিজভীসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

উত্তরা-পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানও বক্তব্য দেন।

পরে আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব।

রাজধানীতে ৬২টির বেশি থানায় পদযাত্রা করে বিএনপি। যাত্রাবাড়ীতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শাহবাগে মির্জা আব্বাস, বংশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পল্লবীতে আবদুল মঈন খান, গুলশানে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহানপুরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পল্টনে আবদুস সালাম, কাফরুলে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রূপনগরে হাবিবুর রহমান হাবিব, চকবাজারে ফরহাদ হালিম ডোনার, মোহাম্মদপুরে মামুন আহমেদ, ভাষাটেকে আবদুল হাই শিকদার, তুরাগে জহির উদ্দিন স্বপন, কদমতলীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রামপুরা খায়রুল কবির খোকন, শ্যামপুর আসাদুজ্জামান রিপন, ধানমন্ডিতে নাসির উদ্দিন অসীমসহ বিভিন্ন থানায় কেন্দ্রীয় নেতারা নীরব পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন। এসব পদযাত্রা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, শ্রমিক দল, জাসাস, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন। গত ১০ ডিসেম্বর কমলাপুরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্যদিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত আড়াই মাসে তারা সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিভাগীয় সমাবেশ করেছে যুগপৎভাবেই। এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু করে, বিভাগ ও জেলা পর্য়ায়ের পদযাত্রা শেষে গতকাল শনিবার তারা থানা থানায় পদযাত্রা শেষ করল। এছাড়া গতকাল সকালে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগরে পানির ট্যাংকি এলাকা থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয় নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টন মোড় থেকে আলাদাভাবে পদযাত্রা করে। বিকালে এলডিপি রাজধানীর পান্থপথ, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী থেকে তিনটি আলাদা পদযাত্রা বের করে।