পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী। বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ করা হয়েছে এই ফুল। পরম যত্নে বেড়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের প্রতিটি গাছ। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফাল্গুনের প্রখর রোদে বাতাসে মাঝেমধ্যে দোল খাচ্ছে মনকাড়া সূর্যমুখী ফুলগুলো। ক্ষণে ক্ষণে পাখি আর কীটপতঙ্গের দল ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ যেন অপরূপ এক দৃশ্য, যেটি আকৃষ্ট করছে সূর্যমুখী ফুল বাগান। চলতি বছর উপজেলার ঈশ্বরদীর মতো সূর্যমুখী ফুলের এত বড় আকারের বাগান আগে পাবনা জেলার আর কোথায় দেখা যায়নি। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে ৬ বিঘারও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। তাই দিনভর সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছে ফুল প্রেমীরা। ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি এলাকার গ্রামের কৃষক রফিকুল জানান, অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে এই ফুল চাষে জমিতে সেচ ও সারের খরচ কম লাগে এবং রোগ বালাই কম। চলতি বছর আমি ২ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ১০০ দিনেই প্রায় ৩০০ কেজি বীজ পাওয়ার আশা করছেন তিনি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া ফুলগাছের ডাটা থেকে জ্বালানি (খড়ি) পাওয়া যায়। রফিকুলের সূর্যমুখীর চাষ দেখে অন্য কৃষকও এই ফুল চাষে আগ্রহের কথা জানান। কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীর মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। আর বিঘায় তেল উৎপাদন হবে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বিঘাতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের। সুফল পাওয়া একই এলাকার কৃষক সোহেল মিয়া জানান, সেও এবার ১ বিঘা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন, স্বল্প ব্যয়ে অধিক ফলন পাওয়ার আশা করছি এবং অনেক লাভজনক তাই আমরা আগামীতেও এই ফুলের চাষ করব।
উপজেলা উপসহকারি কৃষি অফিসার জাহিদ হোসেন হিরোক জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষে রোগ বালাই কম। ফলন ভালো হওয়ায় স্বল্প খরছে অধিক লাভ। এছাড়াও এই ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মানের তেল বীজ পাওয়া যায়। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। সেই সাথে এই তেল বিভিন্ন অসুখেরও প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে বলে জানান তিনি। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি বেগম জানান, দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরও লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে সূর্যমুখী চাষের বিস্তার ও জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নানাভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। ডাল গবেষণা কেন্দ্র ও ঈশ্বরদী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মহিউদ্দিন বলেন, খাটো জাতের বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ‘ই’ থাকায় মেয়েদের বন্ধ্যত্ব প্রতিরোধ ও ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য খুবই উপকারিতা রয়েছে। এজন্য জাতটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।