কারো বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য আইসিটি অ্যাক্ট করা হয়নি

বললেন আইনমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কারো বাকস্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (আইসিটি অ্যাক্ট) করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টর-ল অ্যান্ড পলিসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা জানান তিনি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আইনটা করার পর, অনেক মিস ইউজ এবং অ্যাবিউজ দেখেছি। সত্যকে অস্বীকার করব না, এটা স্বীকার করতেও দ্বিধা নেই। যখন আমি দেখলাম এই আইনটা অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তখন ইমিডিয়েটলি এটা নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সঙ্গে বসেছিলাম। তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস হাই কমিশনের অফিস থেকে আমরা একটা সাজেশন পেয়েছি এবং এই সাজেশনটা আমরা দেখছি। আরেকটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) মামলাটা অনেকেই করেন। যাকে আসামি করা হয় তাকে কিছুদিনের জন্য যেন জেল খাটানো যায়। এই রকম একটা প্রবণতার কারণেই মামলা করা হয় এবং মামলাটা গ্রহণও করা হয়। তখন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে, প্রথমেই যেটা করলাম সেটা হলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যদি ডিএসএ আইনে মামলা করা হলে সঙ্গে সঙ্গে মামলাটা যেন গ্রহণ করা না হয়, গ্রহণ না করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অন্য সেলে পাঠানো হয়। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন সাংবাদিক কেন সকলে না কেন? সাংবাদিক প্রথমে ছিল এই কারণে যে, এই আইনের উদ্দেশ্য যে বাকস্বাধীনতা হরণ করার জন্য নয়, সেটাকে এস্টাবলিস্ট করা। সেই মেসেজটা পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয়া। সেটা আমি মনে করি সাকসেসফুল হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত কারো বিরুদ্ধে এই মামলা গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এই মামলার জন্য গঠিত সেল সত্যি সত্যিই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই মামলা বিবেচনার জন্য গ্রহণ না করা হবে। দ্বিতীয়ত বিচার বিভাগ স্বাধীন তাদের আমি কিছু বলতে পারি না। তবে আমি প্রসিকিউশনকে এই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও পুলিশকে এই নির্দেশ দেয়া আছে যে, এই ব্যাপারে মামলার রুজু করলেই গ্রেপ্তার করা হবে না, আগে সমন দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সব আইনে কিছু কিছু সিস্টেমিক প্রবলেম আছে, কিছু কিছু আইনে ইমপ্লিমেন্টশনে প্রবলেম আছে। তখন ইম্পিমেন্টেশনে প্রবলেম হয় তখন আইনটা টেবিলে আসে। তখন ইম্পিমেন্টেশন প্রবলেমগুলো কীভাবে রিজলব করা যায় তা দেখা হয়। ঠিক সেই কারণে আজকেও আমি বলি, এই আইনটা নিয়ে বসব, যদি রুলসের পরিবর্তন করে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি, অবশ্যই আমরা সে দিকে যাব। যদি তারপরও আমরা দেখি রুলস না আইনটার কিছু সংশোধন করার প্রয়োজন আছে, আমরা সেটাও করব।

আইনমন্ত্রী বলেন, মনে হয় না যদি ঢালাওভাবে আমরা বলি আইনটা বাতিল করে দেয়া হোক, তাহলে সেটা যুক্তিসঙ্গত কারণ হবে না। আসুন আজকে এখানে এ বিষয়ে যা বললেন সে বিষয়ে আপনাদের সাথে বসব। সেটা আপনারা চাইলে রোজার আগেও হতে পারে বা রোজার পরেও হতে পারে। আমার মনে হয় রোজার আগে বসলেই ভালো হবে, কারণ এ বিষয়টি যাতে সামনের বাজেট অধিবেশনেই তোলা যায়। ডিএসএ আইন করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যেরকম এদেশের নাগরিক। আমরাও এরকম এদেশের নাগরিক। আপনাদের যেরকম সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, আমাদেরও সেরকম আনুগত্য আছে। আমরা চাই না সংবিধানবিরোধী কোনো আইন হোক। এর আগে অনুষ্ঠানে আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব তুলে ধরা হয়, এতে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব উপস্থাপন উপলক্ষে ইউএসএইড, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ইউএসএইডের প্রমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটসের (পিএআর) মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার ও আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।