সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ
মৃত্যু বেড়ে ৭ : এখনো কাটেনি আতঙ্ক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদম রসুলপুরে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের তিন দিন পরও আতঙ্ক কাটেনি। লোকজন আশঙ্কা করছে, যে কোনো সময় ফের বিস্ফোরণ হতে পারে। তারা বলছেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিল্প কারখানা অবস্থিত। এসব কারখানায় নজরদারির অভাবে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। গেল বছর ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপো নামে একটি কনেটইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হন। এরপর সতর্কতার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবে সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। যার চরম খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও নিরীহ শ্রমিকরা। এদিকে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারাত্মক আহত আরো একজন মারা গেছেন। তার নাম প্রবেশ লাল শর্মা (৫৫)। গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এদিকে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গেল তিন দিন ধরে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খুঁটিনাটি পরীক্ষা করেছেন। সংগ্রহ করেছেন নানা ধরনের আলামত।
সীতাকুণ্ডের শিল্প এলাকায় কর্মরত শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে ফের বিস্ফোরণের শঙ্কা কাজ করছে। সবার একই অভিযোগ গাফিলতির কারণেই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বয়লার সময়মতো পরীক্ষা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তদারকি ছিল না প্ল্যান্টের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশের। তাই গত শনিবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভাটিয়ারি এলাকার বাসিন্দা নজির হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ড এলাকায় শিল্প কারখানা থেকে সরকার রাজস্ব পায়। শিল্পপতিরা লাভবান হন। কিন্তু এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কথা তেমন কেউ ভাবেন না। দুর্ঘটনায় কখনো মালিকপক্ষের কেউ হতাহত হন না। সাধারণ শ্রমিক ও সাধারণ লোকজন প্রাণ হারান। অথচ তদারকি বাড়ানো হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের দায় নিয়ে। গত বছরের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। আগুনে দগ্ধ হয়ে আহত হন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত এ মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। শেষ হয়নি মামলার তদন্তও। এমনকি নিহতদের মধ্যে এখনো আটজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের লাশ এখনো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রক্ষিত আছে। এ ঘটনার আট মাস পর মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টে গত শনিবার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিএম ডিপো সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের পর গত বছরের নভেম্বরে বিএম কনটেইনার ডিপোর আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা পুরোদমে শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ডিপো ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। ডিপো সংস্কার করার পর গত বছরের ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার সংরক্ষণের অনুমোদন দেয় কাস্টমস। গত বছরের ২৫ অক্টোবর ৯ শর্তে পোশাকপণ্য রপ্তানি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেয়া হয়। শর্ত পরিপালন করায় গত বছরের ৭ নভেম্বর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর অনুমোদন দেয়া হয়। তবে বিএম ডিপোকে রাসায়নিক পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
২০১১ সালে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপ ও নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠান মিলেমিশে বিএম কনটেইনার ডিপো চালু করে। এই ডিপো চালুর আগে বলা হয়েছিল ফের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়। সীতাকুণ্ড এলাকার অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু শনিবার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ দুর্ঘটনা আরেকবার অবেহলার প্রশ্ন সামনে এনেছে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
চমেক সূত্র জানায়, বর্তমানে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে একজন আছেন আইসিইউতে।
শনিবার বিকালে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই ছয়জন নিহত হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরণে লোহার পাত উড়ে গিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে দুজন নিহত হন। এছাড়া আহত ২২ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে রোববার রাতে একজনের মৃত্যু হলো।