সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল
পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে সরকার
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে সরকার আবারো ‘গায়েবি’ মামলা ও গ্রেপ্তারের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রার কর্মসূচির ১ দিনেই ৮ জেলায় ৯৩৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
কথায় কথায় এই ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানিকে সরকার একটা প্রজেক্টের মতো নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মামলায় নাম দিচ্ছে ১০০ জনের, কিন্তু অজ্ঞাতনামা আসামি করা হচ্ছে এক হাজার বা দেড় হাজার জন। গ্রেপ্তারের পর যখন কেউ জামিন নিয়ে বের হন, তখন তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নতুন মামলায়।
এটাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করার চক্রান্ত বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ওই আশঙ্কাই করছি এবং এ কারণেই আবার গ্রেপ্তার শুরু করেছে। পঞ্চগড়ের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ঘটনা ঘটিয়ে ঠিক একইভাবে বিএনপির লোকজনদের আসামি করে গ্রেপ্তার করছে, বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পুরোনো খেলা। নির্বাচনের পূর্বে তারা বিএনপিকে একেবারে মাঠ থেকে বের করে দিতে চায়।
এবার আর সেটা সম্ভব হবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে এবং নিঃসন্দেহে একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব কারাগারে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের জেলে নেয়ার পর তাদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করা হয়। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে বলে মনে হয়েছে। এ সময় তিনি কারাবন্দি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কথা উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রুহুল কবির রিজভী বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ও হার্টের জটিলতায় ভুগছেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রিজভী আহমেদকে সব সময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না।
এমন এক পরিস্থিতিতে রুহুল কবির রিজভীকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রিজন ভ্যানে পুরান ঢাকার আদালতে আনা-নেয়া হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোয় বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি কিছু ধরে যে দাঁড়াবে, সে ব্যবস্থাও নেই। এ অবস্থায় অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই আদালতে আনা-নেয়া করানো হয়।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, যে কোনো বন্দিকে আদালতে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেল কোড বিধি অনুযায়ী আরামদায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা। কিন্তু পুলিশ শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছায় তা অমান্য করে যাচ্ছে, যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে রিজভী কিছুদিন ধরে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার উপযুক্ত সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার এবং কারা কর্তৃপক্ষ অবহেলা করছে অভিযোগ করে গভীর উদ্বেগ জানান বিএনপি মহাসচিব।
সম্প্রতি নিজের এবং দলের নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে কারাবন্দি হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী তারা দুজনই সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু চার দিন তাদের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে রাখা হয়। যেখানে তাদের ফ্লোরে শুতে হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, ভাটারা থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলী, গুলশান থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহজাহান সরকারের রোষানলে পড়ে কারাবন্দি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে চারিদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়। অজানা আশঙ্কা, আতঙ্ক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, তাইফুল ইসলাম, সাঈদ সোহরাব ও তারিকুল আলম, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।