নারী প্রতিনিধিত্ব

সংশোধন হয়নি আরপিও দলগুলোরও ‘গরজ’ নেই

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়সীমা ২ বছর পার হলেও আইন সংস্কার শেষ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলগুলো নিবন্ধন নেয়ার সময় ২০০৮ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু নির্ধারিত একযুগের মধ্যেও তা পূরণ করতে পারেনি নিবন্ধিত দলগুলো।

সূত্র জানায়, গত ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের ‘টার্গেট’ ছিল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)। নতুন করে ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে আরপিও সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। বিগত কেএম নূরুল হুদা কমিশনও এক দফা প্রস্তাবনা পাঠায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও গেল অগাস্ট মাসে একগুচ্ছ প্রস্তাব পাঠায়। নভেম্বরে সিইসির বিশেষ অনুরোধের পর এ ব্যাপারে তৎপর হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন সংস্কার না হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোয় তেমন ‘গরজ’ নেই। অধিকাংশ দল নিয়ম মাফিক কমিশনকে জানাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তাদের দল কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আমাদের কমিটিগুলোতে এরই মধ্যে ২৮ শতাংশ নারী এসেছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩৩ শতাংশ কমিটিতে আসবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সঠিক হিসাবটা এই মুহূর্তে দেয়া কঠিন হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের শর্ত শতভাগ পূরণ না হলেও আমরা নির্বাচন কমিশনের দেয়া ৩৩ শতাংশ এর বেশি দূরে নয়। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমাদের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখতে পারব।

জানা যায়, বিএনপি এরই মধ্যে কাউন্সিল না করায় দলটির পক্ষ থেকে সময় চেয়ে চিঠি দিয়ে রেখেছে। তবে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নারী প্রতিনিধিত্ব ২০ শতাংশ এর নিচে বলে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

আবার কয়েকটি ইসলামী দল ইসির সংলাপে গিয়েও নারী প্রতিনিধিত্বে বিরোধিতা করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে বাস্তবতার নিরিখে এগোতে চান নির্বাচন কমিশন।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। আরপিওর ৯০ খ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির সব দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ২০২০ সাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ইসিতে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে কিন্তু ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

মো. আলমগীর আরো বলেন, দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বে রাখার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধিত কোনো দলের তা নেই, পূরণ করতে পারেনি (২০২০ সালের মধ্যে) এটা বাস্তবতা। তাহলে তো সব দলের নিবন্ধন যাবে। এ বিষয়টা যারা আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তারা বাস্তবতা বিবেচনা করেনি। বর্তমান কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার সময়সীমা ২০২০-এর পরিবর্তে ২০৩০ সাল করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।

সবশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর্যায়ে রয়েছে। ভেটিং শেষ হলে আইন সংশোধনের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠানো হবে।

ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয় নারী নেতৃত্বের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলটির ৭৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী রয়েছেন ২০ জন। দলটির ৯১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির দুটি পদ শূন্য রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দলটির সভাপতিমণ্ডলিতে তিনজন, সম্পাদকম-লীতে সাতজন ও কেন্দ্রীয় সদস্য পদে ৯ জন নারী রয়েছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যের মধ্যে নারী রয়েছে পাঁচজন। নারী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। দলটির ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির মধ্যে নারী ৬৭ জন। দলটির উপদেষ্টা পরিষদে ৮২ জনের মধ্যে নারী ছয়জন। জাতীয় পার্টিতে প্রায় ২০ শতাংশ নারী রয়েছে দাবি করে চিঠি দেয়া হয় বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।