আগামীকাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

উৎসবের নগরী ময়মনসিংহ জানানো হবে একগুচ্ছ দাবি

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোজাম্মেল হক খোকন, ময়মনসিংহ ব্যুরো

প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর আগামীকাল ময়মনসিংহে আসছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন দুপুর ২টায় নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ সংগঠনসহ স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণেই ময়মনসিংহের পথে পথে উৎসবের রং লেগেছে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ও শত শত তোরণে। সেই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। প্রিয়নেত্রীকে বরণ করতে দিনরাত নানা কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

গতকাল ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখে গেছে উৎসবমূখর এই চিত্র।

এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এই জনসমাবেশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ময়মনসিংহবাসি প্রস্তুত। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী থেকেও বড় জনসমাবেশ হবে ময়মনসিংহ। এতে প্রায় ১০ লাখ লোক উপস্থিত থাকবে। ইতোমধ্যে জনসভার মঞ্চ নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর আগমনের অপেক্ষায় আছি আমরা। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশ সফল করতে বিভাগীয় মহানগরসহ প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বর্ধিত সভা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় মহাসমাবেশ সফল করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি এটি হবে বিভাগীয় পর্যায়ের দেশের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ।

একগুচ্ছ দাবি উত্থাপনে সরব সামাজিক সংগঠনগুলো : ময়মনসিংহ আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করছেন জেলা নাগরিক আন্দোলন, জনউদ্যোগ, পাগলা থানা উপজেলা বাস্তায়ন কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা।

এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- নগরীর ভয়াবহ যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণ, উত্তরবঙ্গের সাথে যাতায়াতের জন্য ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন স্থাপন, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রেলপথে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু, কেওয়াটখারী রেল ব্রিজ থেকে ঘুন্টি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সমুদ্র সৈকতের আদলে ব্রহ্মপুত্র সৈকত নির্মাণ, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত, বিমানবন্দর স্থাপন ও অবিলম্বে বিভাগীয় শহর প্রকল্পের বাস্তবায়নসহ ১৮ দফা দাবি জানিয়েছে জনউদ্যোগ নামক একটি সংগঠন।

গত ৪ মার্চ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন।

এছাড়া জেলা নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২৩ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নূরুল আমিন কালাম। এই দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ৩ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও অপরিকল্পিত ব্রহ্মপুত্র নদ খনন বন্ধ করে সঠিকভাবে নদ খনন। সেই সঙ্গে কৃষি-সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের নেতারা ময়মনসিংহে উৎপাদিত কৃষি পন্য সংরক্ষণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন হিমাগর স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাকে উপজেলা ঘোষনার দাবিতে গত ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বাস্তাবায়ন কমিটির নেতারা।

নিরাপত্তার চাদরে ময়মনসিংহ : প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশকে ঘিরে ময়মনসিংহ নগরী নিরাপত্তার চাদরে ডেকে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাছুম আহম্মেদ ভূঞা। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিভাগজুড়ে উৎসব বিরাজ করছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আমরা আশা করছি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩ হাজার ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পোশাকধারি ছাড়াও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন কয়েক শত পুলিশ সদস্য। সেই সঙ্গে নগরীর যানজট নিরসন ও নগরবাসীর ভোগান্তি লাগবে জেলা ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে পৃথকভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মোট কথা প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের শতভাগ নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কোনো ধরনের শঙ্কা বা আশঙ্কা নেই। এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে উচ্ছ্বসিত ময়মনসিংহবাসী। তাকে বরণ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। আর এ কারণেই ময়মনসিংহের উন্নয়নে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের নির্দেশিত প্রকল্পগুলো ওই দিন উদ্বোধন করা হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া আছে। তবে কী পরিমাণ বা কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাবে না।

নগরীতে বন্ধ থাকবে ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল : প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর উপলক্ষ্যে যানজট নিরসন ও নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের লক্ষ্যে নগরীতে ইজিবাইক ও রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। গতকাল সকাল ৬টা থেকে আগামীকাল রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীতে ব্যাটারিচালিত সব ইজিবাইক চলাচল বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে আজ দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীতে সব মোটর রিকশা (মোটা চাকার রিকশা) চলাচলও বন্ধ থাকবে।

মসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ মাহাবুল হোসেন রাজীব এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সবাইকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালন করতে হবে।