ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউক্রেন জুড়ে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ জন নিহত

গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
ইউক্রেন জুড়ে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৯ জন নিহত

ইউক্রেন জুড়ে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে। কিয়েভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর বর্ষপূর্তির দুই সপ্তাহ পর এই হামলা চালানো হলো।

বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মস্কোর এ হামলায় দেশটির অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। রাশিয়া এই প্রথম ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ১০টি অঞ্চলের স্থাপনা ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বরাত দিয়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্রে পশ্চিমাঞ্চলীয় লিভভ অঞ্চলের একটি গ্রামের বাড়ি ধসে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকা থেকে পাওয়া ড্রোন ফুটেজে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া একটি ঘরের আশপাশে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ভবন দেখা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রে মধ্যাঞ্চলীয় দিনিপ্রো অঞ্চলে একজন এবং খেরসনে গোলার আঘাতে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শহরটিতে টানা ৭ ঘণ্টা বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজানো হয়। অক্টোবরে রাশিয়া তাদের নিয়মিত বিমান হামলা শুরুর পর আর কখনোই কিয়েভে একটানা এই সংকেত বাজেনি।

মস্কো বলছে, তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে ইউক্রেনের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে দেশটির যুদ্ধসক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে। অন্যদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেসামরিক লোকদের ক্ষতি ও ভয় দেখানো ছাড়া রাশিয়ার বিমান হামলার কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই।

বৃহস্পতিবারের হামলায় মস্কো ছয়টি কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। রাশিয়াকে এর আগে একদিনে একসঙ্গে এতগুলো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মারতে দেখা যায়নি।

দেশটির কাছে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র স্বল্প পরিমাণে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে প্রায়ই গর্ব করতে দেখা যায়। ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। এক বিবৃতিতে গ্রোসি বলেন, এই অবস্থা চলতে পারে না। কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে ষষ্ঠবার কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে।

গ্রোসি বলেন, একের পর এক হামলায় জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের লাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেখানকার শীতলীকরণ ব্যবস্থা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে জেনারেটর দিয়ে শীতলীকরণ ব্যবস্থা চালু রাখতে যথেষ্ট ডিজেলও দরকার বলে জানান গ্রোসি।

তিনি বলেন, শীতলীকরণ ব্যবস্থা কাজ না করলেই ঘনিয়ে আসবে বিপদ। চুল্লিতে গলন শুরু হয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। এটিই প্রমাণ করে যে, জাপোরিঝিয়ায় পরিস্থিতি কতটা নাজুক এবং বিপজ্জনক।

আইএইএ জাপোরিজিয়া কেন্দ্র ঘিরে একটি সুরক্ষাবলয় গড়ে তুলতে অবিরাম কাজ করছে বলেও জানান গ্রোসি। উল্লেখ এটিই ইউরোপে সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো নিশ্চিত করেছেন, রাশিয়ার হামলায় রাজধানীর প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ি-ঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে কিয়েভের তাপমাত্রা মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে রয়েছে। আর এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কিয়েভ ছাড়াও হামলা হয়েছে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর অঞ্চল ওডিসা এবং দ্বিতীয় বৃহৎ শহর খারকিভে। এ দুটি অঞ্চলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের সম্মুখভাগ থেকে দূরের শহরগুলোতেও বৃহস্পতিবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে গত বছরের আগস্টে ইউক্রেনের জাতীয় গ্রিড থেকে জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সংযোগ ঠিক করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এই লড়াই চলার মধ্যেই ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া। বাখমুত দখলের লড়াইয়ে রাশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির বেসরকারি সামরিক বাহিনী ভাগনার গ্রুপ। তারা শহরটির পূর্বাঞ্চলীয় অংশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে। এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে, শহরটি রক্ষায় এখনো অনড় মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। তবে তিনি এ কথাও বলেন, রুশ বাহিনী সম্ভবত ইউক্রেনে তার যুদ্ধের বর্তমান মাত্রা ধরে রাখতে পারবে না। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ইতিমধ্যে এই হামলার এক বছর পেরিয়ে গেছে। চলমান এই যুদ্ধে উভয় পক্ষে লাখো সেনা হতাহত হয়েছেন। যুদ্ধে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ইউক্রেনীয়। সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত