বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে হাহাকার লেগে থাকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। অবস্থার পরিবর্তন হয় না রমজান মাসেও। রোজার দিনগুলোতেও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য থাকে লাগামহীন। অথচ প্রতিবারই রমজান এলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেন। বলা হয়, রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হবে। বলা হয়, রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। আসলে হয় না এসবের কোনোকিছুই। ঘটে না আশ্বাসের প্রতিফলনও।
এবারও দুয়ারে কড়া নাড়ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। এরই মধ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও একটু একটু করে আরো বাড়তে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত আকাশছোঁয়া এ দাম কোথায় গিয়ে থামে, তা নিয়েই এখন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষের যত চিন্তা।
একজন মুদি ব্যবসায়ী জানান, সবকিছুরই তো দাম বাড়তি। দেশে কোনোকিছুর দাম বাড়লে সেটা আর কমে না। অপর একজন দোকানি বললেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসন ও ট্যাংয়ের দাম। আর আগে থেকে বাড়তি চিনি, তেল, আটা-ময়দার দাম কমেনি।
রমজান সামনে রেখে বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে। উদ্বেগ বাড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের। এ দোকান ও দোকান ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না অনেকে। প্রতিদিনের ডাল-ভাতের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে চুপচাপ বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
রমজানের আর অল্প কিছুদিন বাকি তাই অনেকেই রোজার দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখতে চান। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে তাদের। অনেকে বাজারে গিয়ে দরদাম করেই ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দাম একটু কমার অপেক্ষা করছেন। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও যে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন থাকবে, সেটা বুঝতে বাকি নেই সীমিত আয়ের মানুষের। আর সে কারণেই তাদের যত অস্বস্তি।
রোজায় ইফতারি তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসনের বেশি ব্যবহার হয়। গত কয়েকদিনে এসব পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। এমনকি শরবত তৈরির জন্য যে ট্যাং লাগে, বাজারে সেটার দাম এখন রীতিমতো বাড়তি।
এদিকে বাজারে গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাসখানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা দরে, যা এখন ৯৫-১০০ টাকা। ছোলার সঙ্গে ছোলাবুটের দামও বেড়েছে ৫-১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
এছাড়া অ্যাংকর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে ৭০-৮০ টাকা এবং একইভাবে বেসনের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল-চিনি মিলছে না। বেঁধে দেয়া দামে প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। খোলা চিনির ক্ষেত্রে নির্ধারিত দাম ১০৭ টাকা হলেও এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল চিনি (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামে।
এদিকে মশলার বাজারে আদা-রসুনের বাড়তি দাম কমেনি। উল্টো পেঁয়াজের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে মাছ-মাংস এখন অনেকটাই স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মুরগির বাজার এক-দেড় মাস ধরেই অস্থির। দফায় দফায় বেড়ে ব্রয়লারের কেজি এখন ২৫০-২৫৫ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৪০-৩৫০ টাকা। প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা দরে। মাসের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মানভেদে রুই-কাতলার কেজি হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা। চাষের তেলাপিয়া পাঙাশও ২০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ইফতার শুরুর আগেই বেড়ে গেছে লেবুর দাম। এক হালি লেবু আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত। একই কারণে বাড়ছে বেগুনের দামও। গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে। তবে লম্বা বেগুন ৫০-৭০ টাকা, যা সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান রমজান ঘনিয়ে আসছে। তাই বেগুন-লেবুর চাহিদাও বেড়েছে। অনেকে রমজানের আগেই বেশি পরিমাণে কিনে ঘরে মজুত রাখছেন। এ কারণে বাজারে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে।