ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা পূরণ হচ্ছে না। এদিকে, ডাকসু সচল করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাম সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর ইতিবাচক সাড়া থাকলেও সেটি হচ্ছে না। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ডাকসু নির্বাচন করতে যে পরিবেশ দরকার সেটি আগে নিশ্চিত করতে হবে।
সবশেষ ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তা দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন, দাবি-দাওয়ার পর এই নির্বাচন হয়। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ২৩ মার্চ। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এতে ২৫টি পদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ২৩টি পদে জয়লাভ করে। অন্যদিকে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় লাভ করে বর্তমান গণ অধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ডাকসুর মেয়াদ পার হয়। এরপর বর্ধিত ৯০ দিন ২০ জুন শেষ হলেও তখন করোনার দোহাই দিয়ে তখন নির্বাচন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে করোনার পর ২০২০ সালে অক্টোব মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলেও এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি নির্বাচন। পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়েও দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ডাকসুর মেয়াদ ও নির্বাচন নিয়ে গঠনতন্ত্রের ৬(সি) ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিয়ন ৩৬৫ দিন দায়িত্ব পালন করবে। কোনো কারণে নির্বাচন না হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ৯০ দিনের কম সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে এ ইউনিয়ন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। গঠনতন্ত্রের ৫(এ) ধারায় বলা হয়েছে- কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি বা ভিসি ইউনিয়নের স্বার্থে সংসদ ভেঙে দিতে পারবেন। নতুন নির্বাচনের জন্য পুরো নির্বাহী সংসদকে ভেঙে দেয়ার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন তিনি। সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইউনিয়নকে সাসপেন্ড করতে পারবেন। ৮(ই) ধারায় বলা হয়েছে- ‘ডাকসুর সভাপতি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নির্বাচনের দিন, তারিখ ও ভোটগ্রহণের সময় ঠিক করে সবাইকে জানাবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ডাকসু নির্বাচন প্রতিবছরই হতে পারে। প্রশাসন করে না কেন? এটা তাদের ব্যর্থতা। এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না। যদিও আইনের ভিতর আছে বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নিবে। যদিও, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু সরকার এখন শুধু ডাকসু নয়; কোনো নির্বাচনই দিতে চায় না।
ডাকসুর সাবেক এজিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসু নির্বাচন দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনগত ও নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ। ছাত্রলীগসহ সকল ছাত্র সংগঠনের প্রাণের দাবি ছিল যে, ডাকসু নির্বাচন ক্যালেন্ডার ইভেন্টে পরিণত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে আমি মনে করি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
তিনি আরো বলেন, আর আমরা মনে করি ডাকসু নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সম্পর্কিত এবং অবিচ্ছেদ্য বিষয়। আমরা যদি দক্ষ গ্রাজুয়েট, বিশ্বের উচ্চ শিক্ষার মানচিত্রে স্থান দখল করে নিতে চাই তার জন্য ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ব্যাপারে আমাদের ভাবা উচিত। এই নির্বাচনের জন্য একটা পরিবেশ খুবই দরকার। সেটার জন্য কাজ করছি।