ঢাকা ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কামাল মজুমদারের ঘোষণা

জাকির হোসেনের নেতৃত্বেই চলবে মনিপুর স্কুল

জাকির হোসেনের নেতৃত্বেই চলবে মনিপুর স্কুল

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে অচলাবস্থার মুখে পড়া রাজধানী ঢাকার মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন এবং তার অধীনে স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ক্লাসে ফেরারও আহ্বান জানান এক সময় এ স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল মজুমদার। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ও অবৈধ নিয়োগকৃত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনকে বিদায় নিতে হলো। প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের উ™ূ¢ত পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কামাল মজুমদার। গতকাল শনিবার বিদ্যালয়ের রূপনগর শাখা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন, যিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে এ দায়িত্ব পান।

এর আগে সরকারি তিনটি তদন্তে অধ্যক্ষ হিসাবে ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। এর সূত্র ধরে আদলতের নির্দেশনা মেনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেনকে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য গভর্নিং বডির সভাপতিকে চিঠি দেয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা ও এই চিঠি আমলে না নিয়ে সভাপতি সময়ক্ষেপণ করেন। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এছাড়া সভাপতি এখতিয়ার বহির্ভূত স্কুল ৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক ও অভিভাবকরাও বন্ধের সিদ্ধান্তে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্কুলগুলোতে। ফরহাদ হোসেনের পক্ষে কয়েকজন শিক্ষক স্কুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে দায়িত্ব না বুঝিয়ে দেয়ায় গভর্নিং বডির সভাপতিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। কেন দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হলো না তা জানাতে ৩ দিনের মধ্যে সময় বেধে দেয়া হয়। নইলে বিধি আলোকে কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও জানানো হয়। এমন পরিস্থিতে কামাল আহমেদ মজুমদার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে গভর্নিং বডির সভাপতির উপস্থিতিতে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব পালন করার কথা জানান। সূত্র জানায়, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। গতকাল তিনি ঢাকায় ফিরে জাকির হোসেনকে তার অফিসে ঢেকে নেন। তাকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন। পরে জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।

এ সময় স্কুলের বেশ সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চেও ছিলেন বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পরিচয় দিয়ে কামাল মজুমদার বলেন, প্রাক্তন অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ শেষ, স্বাভাবিকভাবে নতুন আসবে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামান্য ব্যাপার উচ্চ আদালতে গড়িয়েছে, যা হওয়ার দরকার ছিল না। হাইকোর্টের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন জায়গায় এটি নিয়ে মামলা, হামলা, নিউজে এসেছে এখানে মারামারি হবে। এত নামি একটা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হবে তা আমরা হতে দিতে পারি না। আগে যিনি ছিলেন তার অধীনে শিক্ষকরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেভাবেই আজকে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তার অধীনে কাজ করে যাবেন।

প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এ স্কুলে গত কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা আসছে। এতে শিক্ষার্থীদের জিম্মি দশায় পড়ার কথা বলেন অভিভাবকরা। এর একদিকে আছেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের অনুসারীরা, অন্যদিকে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের সমর্থকরা। বয়সের কারণে অবসরে যাওয়া প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরহাদের দায়িত্ব ছাড়তে না চাওয়ায় বিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর মধ্যে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ছুটির ঘোষণা আসে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত