ঋতুচক্রের পালাবদলে এখন চলছে বসন্তকাল। একটু উষ্ণতা আর মাতাল সমীরণে সজীব-সতেজ হয়ে উঠছে প্রকৃতি। হরেক রকম বাহারি ফুলে সেজেছে চা-বাগানের বাংলোর আঙিনা। মৌলভীবাজারের চা-বাগানের বাংলোগুলোয় এ দৃশ্য দেখা যায়। মনোহরি এসব ফুল প্রকৃতিতে যেন রূপের আগুন লাগিয়েছে। চিরাচরিত নিয়মেই চা-বাগানের বাংলোতে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বাগানে থরে থরে ফুটে আছে গাঁদা, রক্তগাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ, ভেটুনিয়া, চায়না গোলাপ, মোরগ ঝুঁটিসহ হরেক রকম দেশি-বিদেশি ৪৫ প্রজাতির ফুল। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের লংলাভ্যালির চা-বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাজনগর, মাথিউড়া, ইটা, করিমপুর, উত্তর ভাগ, ইন্দানগর ও লুয়াইউনি বাংলোর আঙিনা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। রাজনগর চা-বাগানের বাংলোয় গেলে দেখা যায়, হরেক রকম জাতের ফুল সৌরভে মাতিয়ে রেখেছে। বাংলোর যেদিকে চোখ যায়, মনে হয় প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া এ যেন স্বর্গরাজ্য। এখানে হাটলে যেমন চোখ জুড়ায়, তেমন প্রাণও জুড়ায় সুবাসে। এই বসন্তে বাইরে থেকে প্রায় দিনই দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। মনোরঞ্জনের জন্য বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে। রাজনগর চা-বাগানে দেখা হয় সিলেট থেকে আসা একটি প্রাইভেট কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের কেউ ছবি তোলেন, কেউ নীরবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের স্বাদ আস্বাদন করেন। এ সময় কথা হয় নুরি, আয়শা, শফি ও রিপনের সঙ্গে। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরি বলেন, ‘বসন্তের ফুলে মন মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। একসময় ধারণা করতাম, চা-বাগানে শুধু সবুজ চা-গাছ থাকে। আজ সেই ধারণা ভুল হয়ে গেল।’ একই কলেজের শিক্ষার্থী শফি বলেন, ‘এ যেন অবিরাম বাংলার রূপ। যত দেখি তত মধুর লাগে। প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য খুবই আকৃষ্ট করেছে। প্রায় ৪৫ জাতের ফুলের সমাহার দেখলাম।’ বিকালের দিকে কিংবা গোধূলিলগ্নে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে উত্তরভাগ ইন্দানগর চা-বাগানের বাংলোসহ বিভিন্ন স্পট। নানা রঙের বাহারি ফুলে সাজানো বাংলো। কথা হয় চা-বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী মোতাহির আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগুন লাগা ফাগুনে হরেক রকম ফুল ফুটেছে। চা-বাগানের বাংলোয় দেশি-বিদেশি অর্ধশত জাতের ফুল আছে। যা দেখতে খুব সুন্দর।’ চা-শ্রমিক নেতা প্রদীপ যাদব বলেন, ‘সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর সাহেবদের মন ফ্রেশ রাখার জন্য আদিকাল থেকে চা-বাগানের বাংলোয় ফুলের চাষ হয়ে আসছে। এছাড়া অতিথি ও দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের জন্যও ফুল লাগানো হয়। যে বাগানের বাংলোর ফুল যত সুন্দর; সে বাগানের অবস্থাও তত সুন্দর থাকে।’ উত্তরভাগ ইন্দানগর চা-বাগানের ম্যানেজার সৈয়দ আছাদুজ্জামান বলেন, ‘বাগানের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাগানের বাংলোয় ফুলের চাষ হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক স্বাদ পাওয়ার জন্য সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয় বাগানের বাংলো।’