কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চ দুপুরে আগ্নিকান্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো ঘটনার জের ধরে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটে। তবে কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তাদের নাম পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করে তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্ত করা জরুরি বলে মনে করেন তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মামলা দায়েরসহ নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংকালে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণ পত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অনন্ত ৫০ জন রোহিঙ্গা সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা বলছেন, এটা পরিকল্পিত নাশকতা। এসব রোহিঙ্গারা যেসব তথ্য দিয়েছে যে নাম পাওয়া গেছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন নাম বলেছে। কিন্তু এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে তদন্ত কমিটি। তিনি জানান, আড়াই টায় আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে এক স্থানে না, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক স্থানে আগুন লেগেছে। এটা নাশকতার প্রমাণ করে। একই সঙ্গে অগ্নিকান্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটাও নাশকতা প্রমাণ করেছে। আগুন রোহিঙ্গারা নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছে এটা সত্য। তবে এটা কৌশলে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, ‘আগুন নেভানো চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরী’। তিনি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাথে আলাপ করে ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে জড়িতদের শনাক্ত করতে মামলা করা জরুরি। প্রতিবেদনে করা অন্য ৯ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারে মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত এবং বড় রাস্তার ধারব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা। প্রেসব্রিফিং কালে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ঘরসহ ২ হাজার ৮০৫ টি নানা স্থাপনা এবং ১৫ হাজার ৯২৫ জন রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়ে ছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।