সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হন ভ্যান চালক ইদ্রিস মীর (৩৮)। বাবার ফেরার অপেক্ষায় এখনও প্রহর গুনছে ছেলে পাঁচ বছরের আনাস। বাবা কখন আসবে, চুমু দিবে, বারবার প্রশ্ন করছে পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু সে উত্তর নেই কারও কাছে। মৃত্যু বা পরপারে চলে যাওয়ার বিষয়টি এখনও বোঝার বয়স যে হয়নি আনাসের। তাইতো ছোট্ট মনে সরল বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করছে সে, পছন্দের নুডুলস আর চকলেট নিয়ে বাবা ফিরবেন, কোলে তুলে নিয়ে চুমু দিবেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগ এলাকায় বসবাস ইদ্রিস মীরের পরিবারের। একটি ভবনের নীচতলার তিনকক্ষের ফ্লাটের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে স্ত্রী, মা এবং দুই সন্তান নিয়ে বাস করতেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা এখন পরিবারের সদস্যরা। এমন আকস্মিক মৃত্যু কখনওই আশা করেননি পরিবারের সদস্যরা। সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর সংসার চালবে কিভাবে জানেন না শোকে স্তম্ভিত স্ত্রী রানু বেগম। ইদ্রিস মিরের মা ষাটোর্ধ্ব আকলিমা বেগম কিছুক্ষণ পরপরই ডুকরে কেঁদে উঠছেন। পুত্র হারানোর শোকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ইদ্রিস মীরের পৈতৃক নিবাস শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায়। অল্প বয়সে বড় বোন এবং মায়ের সাথে রুটি-রুজির সন্ধানে ঢাকায় আসেন তিনি। সংসারে চালাতে মা ও বোনকে সহযোগিতা করতে শুরু করেন রাস্তায়-রাস্তায় হেঁটে ঝালমুড়ি বিক্রি। পরবর্তীতে বেছে নেন ভ্যানগাড়ি চালানোর কাজ। একপর্যায়ে আজাদ স্যানেটারির ভ্যানগাড়ি চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত ছিলেন। শুরুতে ভাড়ার ভ্যান চালালেও কয়েক বছর আগে লোন নিয়ে কেনেন নিজের ভ্যান। যার কিস্তির টাকা এখনও চলমান। ইদ্রিস মিরের বড় সন্তান রিফাত আহমেদ যাত্রাবাড়ির তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে এবছর এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ছোট ছেলে আনাস আহমেদকে সবেমাত্র ভর্তি করা হয়েছে ওই একই মাদ্রাসায়।
ইদ্রিসের প্রতিবেশীরা জানান, বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে নিজ ভ্যানেই বসা ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের পর রাস্তায় ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়েছিল ইদ্রিস মীরের নিথর দেহ। পরবর্তীতে তার সহকর্মীরা লাশ চিনতে পেরে মীরহাজারিবাগে ইদ্রিসের পরিবাবের কাছে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে প্রশাসন লাশ নিয়ে যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। মর্গের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর জুরাইন সরকারি কবরস্থানে ইদ্রিস মিরকে দাফন করা হয়। ইদ্রিস মীরের বড় ছেলে রিফাত আহমেদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এতদিন বাবার আয়ের উপর সংসার চলেছে। এখন কি হবে জানিনা, বড় সন্তান হসেবে আমাকেই হয়তো দায়িত্ব নিতে হবে। না হলে সংসার চলবে কিভাবে, ছোটভাই, দাদি তাদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয় আছে।’ ইদ্রিস মীরের স্ত্রী রানু বেগম বলেন, ‘আমার ছোটছেলেটা বাবা ছাড়া কিছুই বোঝে না। বাবা আসলে খাবে, না আসলে খাবে না। বাবা কাজে যাওয়ার আগে প্রতিদিন ছেলেটার কপালে চুমু দিয়ে যেতেন। আনাস এখনও ভাবছে বাবা নুডলস-চকলেট নিয়ে আসবেন। সবাইকে জিজ্ঞেস করছে বাবা কখন আসবে। কি উত্তর দিবো ছোটো ছেলেটাকে?’