অন্যরকম

বাতাসে ভাসমান বেলুন

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মাকিন ভ্রমণ পিপাসু স্টিভ ফরেস্ট ছয় বারের প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে আগস্টের ৫ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে ৯৬ কিমি. দূরে অবস্থিত নর্থহাম বিমান বন্দর থেকে প্রথমবার ২০ মিনিট উড্ডয়ন করান। ১৯৯৫ সালেও তিনি প্রথমবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আরেকটি বেলুন ঊড়ান। ২০০৭ সালে যেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সে সময় নেভাদা ও ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে ছোট একটি বিমান আকাশে অবস্থান করছিল। এতে সংঘর্ষ হলে ২০০৮ সালে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বেলুন দেখা যাওয়া ইস্যুতে চীনের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশটির জঙ্গি বিমান এগুলো ভূপাতিতও করেছে। অভিযোগ করা হয়, বেলুনগুলো গোয়ন্দা নজরদারি করছিল। যেই বেলুন নিয়ে এত কিছু এবারে আসুন আমরা ভিন্ন আরেক মেজাজে জেনে নেই বেলুনের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য।

বেলুন কি? : এটি মূলত নমনীয় একটি প্লাষ্টিকাকৃতির থলে যা বাতাস বা গ্যাসের মাধ্যমে আকাশে উড়ে। যাত্রী, মালপত্র ও যন্ত্রপাতি বহনে ব্যবহার হয়ে থাকে। বেলুন মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম আকাশে উড্ডয়নের জন্য আবিষ্কৃত হয়।

কিভাবে উড়ে থাকে? : এটির ভেতরে হিলিয়াম, হাইড্রোজেন বা গরম বাতাস সদৃশ গ্যাস থাকে, যা কিনা বয়োইয়ান্ট গ্যাস নামে পরিচিত। এগুলোর কিছু আবার আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বহন করে থাকে। বাতাসের গতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বেলুনের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

প্রথম কে আবিষ্কার করেন? : ১৭৮৩ সালের ৪ জুন ফ্রান্সের জোসেপ মাইকেল ও জ্যাকুজ মন্টগলফিয়ার প্রথম বেলুন আবিষ্কার করেন। ছোট্ট শহর লিয়ন থেকে প্রথম এটি উড়ানো হয়। ১০.৫ মিটার ব্যসার্ধ বিশিষ্ট কাপড় ও কাগজে তৈরি ছিল এটি।

প্রকারভেদ : শুধুমাত্র উষ্ণ বাতাস সমৃদ্ধ, গ্যাস ও গ্যাস এবং উষ্ণ বাতাস সমৃদ্ধ তিন প্রকারের বেলুন আমরা দেখে থাকি। ১৯৫০ সালে বেশি চাপ সমৃদ্ধ একটি বেলুন আবিষ্কার হয় যেটি কিনা অনেক বেশি উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম ছিল।

উষ্ণ বাতাসের বেলুনের ব্যবহার : এটি নাইলনের তৈরি পলেস্টার কাপড়ে তৈরি যেটি কিনা ৩ কিমি. পর্যন্ত উড্ডয়ন সক্ষম। এরকম বেলুন ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয় যা হাজার কিমি. পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে।

অধিক উচ্চতার বেলুন : এগুলো হিলিয়াম বা হাইড্রোজেন গ্যাসের তৈরি। বায়ুমন্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার(দ্বিতীয় স্তর) পর্যন্ত এটি উড়তে পারে। বেশি উচ্চতায় বিভিন্ন রকমের পরীক্ষামূলক যন্ত্রপাতি পরিবহনে এটি সক্ষম। এধরনের বেলুনগুলো দ্বিতীয় স্তরের ১৮ থেকে ৩৭ কিমি এর মধ্যে উড়তে পারে।

সুপার বেলুন কী : এগুলো পলেস্টারের তৈরি। খুব বেশি প্রসারিত হয় না কারণ গ্যাস দিয়ে এটিকে প্রবল চাপ দিয়ে উড়ানো হয়ে থাকে।

কী পরিবহণ করা হয়? : আধুনিক যুগে বেলুনে করে রেডিও ট্রান্সমিটার, ক্যামেরা, স্যাটেলাইটের দিক নির্ণয় সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, গিজিএস ইত্যাদি বহন করা হয়। এছাড়াও গবেষণার নানা বস্তও পরিববহন করা হয়ে থাকে।

কিভাবে দিক নির্দেশ করে? বেশিরভাগ বেলুনেই ইঞ্জিন বা জ্বালানি দরকার হয় না। বাতাসই মূল চালিকা শক্তি। কিছুর সাথে আবার পাখা থাকে যা স্টিয়ারিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

দূরবর্তী বেলুনিং কী : ১৯৭৮ সালে ইগল-২ নামের হিলিয়াম সমৃদ্ধ একটি বেলুন আমেরিকার বেন এল আবরুজো, ম্যাক্সি এন্ডারসন ও ল্যারি এম যৌথভাবে অধিক দূরত্ব সমৃদ্ধ এটি উড্ডয়ন করেন। ১৯৮১ সালেও আরেকটি উড়ানো হয়। পরে ১৯৮৪ সালে আটলান্টিক সীমানায় প্রথম জোসেপ কিটিংগার ‘ট্রান্সপ্যাসিফিক’ বেলুন হিসেবে প্রথমবারের মতো ১১ বছরের চেষ্টায় দূরবর্তী উচ্চতায় যেতে সক্ষম আরেকটি বেলুন তৈরি করে। ১৯৯৯ সালে বার্টার্ন্ড পিকার্ড (সুইডিশ) ও ব্রেইন জোনস (ব্রিটিশ) নাগরিক যৌথভাবে উষ্ণ বাতাস ও হিলিয়াম গ্যাস সমৃদ্ধ আরেক বেলুন আবিষ্কার করেন যা কিনা প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী সফল উড্ডয়ন হিসেবে পরিচিত।

কিভাবে খেলার অন্তর্ভুক্ত হলো?

১৯০৬ সালে মার্কিন প্রকাশক জেমস গর্ডন বেনেট প্রথম দূরপাল্লার উড্ডয়নের জন্য ট্রফি ঘোষণা করলে বেলুনকে খেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ১৯৬০ সালে এটি খেলা হিসেবে স্থান করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। ইন্টারন্যাশনাল এরোনটিক্যাল ফেডারেশন (এফএআই) গ্যাস ও উষ্ণ বাতাস দিয়ে তৈরি বেলুনের রেকর্ড সংগ্রহ শুরু করে।

সামরিক বাহিনীর কাছে কেন এত প্রিয়? বিভিন্ন মিশন ও গোয়েন্দা নজরদারির জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই এই খাতে বেশ বিনিয়োগ করে নানা দেশ। সস্তা ও খুব সহজেই বিভিন্ন চিপ ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তর ছবি তোলা যায় এসব বেলুন ব্যবহার করে। সূত্র : ইন্টারনেট