ঢাকা ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএসএমএমইউ’র সমাবর্তন

সেবায় আরো আন্তরিক হতে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সেবায় আরো আন্তরিক হতে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন গতকাল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভারতের বিহারে ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজবর্ধন আজাদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

সমাবর্তনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুর রহমান প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য, সম্মানিত ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসক, সেবিকা, অফিস প্রধানরা ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সমাবর্তনে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়- আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ স্কুল সাইকোলজিস্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইজরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন, সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ডা. কাজী শহীদুল আলমকে।

রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেন, উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে গবেষণা এবং অধিকতর উন্নত চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করায় দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যেয়ে কম খরচে দেশেই উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ। রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যে কোনো রোগীর পরম কাম্য। আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভালো ডাক্তারের পাশাপাশি বড়ো মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই, অথচ আমাদের চিকিৎসা শিক্ষায় গবেষণার পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরণ উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। যে কারণে আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই শুধু পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমূহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে।

চ্যান্সেলর বলেন, রোগী আছে বলেই চিকিৎসা পেশা আছে। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত। বড়ো ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড়ো বড়ো টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না। কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকদের জন্য যাতে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সাহচর্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক করে ও আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। তাই নার্সদের রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হতে হবে।

সমাবর্তন বক্তা ভারতের বিহারে ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজবর্ধন আজাদ ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার আন্তঃবিবর্তন- বিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক বক্তব্য রাখেন। চিকিৎসা শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চ্যালেঞ্জটি বিশাল এবং সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করা। সংস্কৃতি, ভাষা এবং ভূগোলের বৈচিত্র্য এ অঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আরেকটি দিক হলো নিম্নমধ্যম এবং ধনী সম্প্রদায়ের বিস্তৃত বিভাজন এবং যারা বস্তি বা গ্রামে বসবাস করে তারা উচ্ছেদ এবং স্থানান্তরের ক্রমাগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের একটি অবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা সমস্যাযুক্ত হতে পারে। একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী পদক্ষেপ হবে দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা।

তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যের চাহিদাও অনেক বেশি। সম্প্রদায়ভিত্তিক চিকিৎসা শিক্ষা আংশিকভাবে এই চাহিদাগুলোকে সমাধান করতে পারে এবং বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে কোভিডের পরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গুরুতর বায়ুদূষণ কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মেডিক্যাল ছাত্রদের স্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব মোকাবিলার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে শেখানো উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০৫টি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে অন্যান্য ৪১টি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে- এর মধ্যে ৬২টি রেসিডেন্সি কোর্স রয়েছে। চালু হয়েছে এমএসসি নার্সিং কোর্স। প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে বাড়ি ফিরছেন। এরই মধ্যে চালু করেছি ১৫টি ডিভিশন, খোলা হয়েছে নতুন ৭টি বিভাগ এবং ডেন্টালের ৫টি বেসিক কোর্স। দীর্ঘ ২৪ পর ফরেনসিক মেডিসন বিভাগ চালু হয়েছে। জেনোম সিকোয়েন্সিং, এন্টিবডি সেন্সিটিবিটিসহ বেশকিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ফলে দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে কম খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমও সমন্তরালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফান্ড ৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে ২২ কোটিতে উন্নীত করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ১০০ কোটি টাকার সমন্বিত গবেষণা প্রকল্প থেকে আমরা সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা গবেষণা খাতে বরাদ্দ পেয়েছি। এ পর্যন্ত ২৪ জন পিএইচডিতে ইনরোলড হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন পিএইচডি অর্জন করেছে।

এবারের সমাবর্তনে সাড়ে তিন হাজার স্নœাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসক, সেবিকা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে মেডিসিন অনুষদে প্রায় আটশ জন, সার্জারি অনুষদে প্রায় এক হাজার চারশ জন, শিশু অনুষদে প্রায় তিনশ জন, বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল অনুষদে পাঁচ শতাধিক, প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদে প্রায় তিনশ জন, ডেন্টাল অনুষদে শতাধিক স্নাতকোত্তর চিকিৎসক এবং নার্সিং অনুষদে শতাধিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সেবিকা।

সমাবর্তনে ৩৫ জন মেধাবী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসক, সেবিকাকে চ্যান্সেলর কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত