কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন দীর্ঘ ২৮ দিন পর গতকাল প্রথম ক্লাস করেছেন। অভিযুক্তদের শাস্তির পর প্রথম দিনের ক্লাস শেষে ফুলপরী খাতুন অভিমত ব্যক্ত করে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো ক্লাস করতে পারছি, অনেক ভালো লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতোই আছি, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নিরাপত্তার কোনো অভাব অনুভব করছি না, বরং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। নতুন হলে কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা, সংকোচ কিংবা আতংকের মতো কিছু মনে করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফুলপরী বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কিছু মনে হয়নি। হলের আপুরাও আমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছেন। তারা অনেক হেল্পফুল। হলের শিক্ষকরাও সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। অভিযুক্তদের কি উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ফুলপরী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। তাই এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ফুলপরীর বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। ক্লাসে এসে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সে না পড়তে হয় এ জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। ১২ মার্চ বাবা আতাউর রহমানের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ফিরেন ফুলপরী। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের বকুল ব্লকের ৫০১ নম্বর কক্ষে উঠেন। এই হলেই তার নামে বরাদ্দ হওয়া সিটে থাকবেন তিনি। এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ফুলপরীর পছন্দ মতো আগেই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সে বরাদ্দকৃত সিটে উঠেছে। একজন আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে হলে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ তার প্রাপ্য সব সুবিধা দেয়া হবে।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন ফুলপরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে স্থানান্তরিত করে তার পছন্দ মতো আবাসিক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে আসন বরাদ্দ দেন।
প্রসঙ্গত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীর উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে অশ্লীল গালাগাল, মারধর ও তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা এবং সর্বশেষ তদন্তের ফলাফল ও নির্যাতনের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সানজিদা চৌধুরীসহ তার পাঁচ সহযোগীকে ক্যাম্পাস খেকে বহিষ্কার করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।