ব্যাংক বিপর্যয় ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
কোনো একটি ব্যাংক দেউলিয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক কাজ করে এবং প্রশ্ন আসে পরবর্তীতে কোনটি? অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন কমিয়ে দেয় বা সরে যায়। বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙে পড়ে। আমানতকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন যদি তাদের ফান্ড আমানত-বীমা প্রকল্পের মধ্যে না আসে।
১০ মার্চ মূলধন সংগ্রহের ব্যর্থ প্রচেষ্টা ও আমানত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে হঠাৎ আমেরিকার ১৬তম বৃহত্তম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি), যার প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে, বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে এমন ঘোষণা দিয়েছিল গত ৮ মার্চ। ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে আমেরিকান ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের ঘোষণা আসে এটি বন্ধ করে দেয়ার।
সিলিকন ভ্যালির এভাবে ধসে পড়ার কারণে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। সপ্তাহজুড়ে অন্যান্য আঞ্চলিক ঋণদাতাদের মুষ্টিমেয় সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া শুরু করে এবং সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কল্পনা করা সহজ যে, উদ্বিগ্ন করপোরেট কোষাধ্যক্ষরা তাদের আমানতগুলো সবচেয়ে বড় ব্যাংকে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু ১২ মার্চ আমেরিকার ট্রেজারি ফেডারেল রিজার্ভ ও ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের (এফডিআইসি) যৌথ প্রতিক্রিয়া আমানতকারীদের উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করেছে। এর মাঝে যেখানে আরও একটি প্রতিষ্ঠান সিগনেচার ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে।
এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাজের দুটি ধরন ছিল। প্রথমটি হচ্ছে এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংকের আমানতকারীদের সম্পূর্ণরূপে অর্থ শোধের ব্যবস্থা করা। নিউইয়র্কভিত্তিক ঋণদাতা সিগনেচার ব্যাংকটি ১১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদসহ রোববার অধিগ্রহণ করে মার্কিন সরকার।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজারের চলমান ঘটনাগুলোর আলোকে এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করার পর গ্রাহকদের এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে রক্ষা করার জন্য সিগনেচার বন্ধ ঘোষণা করা হয়
কোনো ক্ষেত্রেই করদাতাদের বিল পরিশোধ করতে হবে না। উভয় ব্যাংকের ইক্যুইটি গ্রাহক ও অনেক বন্ড গ্রাহকদের জন্য এফডিআইসির ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ফান্ড, যা সমস্ত আমেরিকান ব্যাংক পরিশোধ করে, যে কোনো অবশিষ্ট খরচ বহন করবে। সোমবার সকাল থেকে উভয় ব্যাংকের আমানতকারীরা তাদের অর্থের সম্পূর্ণ লেনদেন করার প্রবেশাধিকার পাবেন।
দ্বিতীয়টি হলো ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এ একটি নতুন ঋণ সুবিধা পদ্ধতি, যাকে বলা হয় ব্যাংক টার্ম ফান্ডিং প্রোগ্রাম। এটি ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি, মর্টগেজ এবং অন্যান্য সম্পদকে জামানত হিসাবে বন্ধক রাখতে অনুমতি দেবে। ব্যাংকগুলো নগদ বা অগ্রিমের বিনিময়ে ঋণের অভিহিত মূল্য পাবে। সেই নগদে ঋণ নেয়ার হার ‘এক বছরের সূচক অদলবদল’ এ স্থির করা হবে। বাজার সুদের হার হবে প্লাস শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
ট্রেজারি ও ফেডের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বেশ কয়েকটি প্রশ্নও তুলছে। প্রথমটি হলো, কেউ এসভিবি বা সিগনেচার কিনবে কি না। একজন শীর্ষ ট্রেজারি কর্মকর্তা বলেন, সপ্তাহের শেষে বিষয়গুলো দ্রুত গতিতে সমাধান করা জরুরি ছিল। কারণ সোমবার সকালে আমানতকারীদের আশ্বস্ত করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অন্য ব্যাংকের জন্য এসভিবির বিড করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হবে, যা এক সপ্তাহে সম্পন্ন করা কঠিন ছিল। এসভিবি বা সিগনেচারের জন্য একটি চুক্তি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বা সপ্তাহে আসতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই পদক্ষেপগুলো সরকারি বেলআউটের সমতুল্য কি না। এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়। যেহেতু কর্মকর্তারা বন্ড ও ইক্যুইটি গ্রাহকদের বিলুপ্ত করার মাধ্যমে আমানতকারীদের সম্পূর্ণরূপে অর্থ শোধ করতে পারেন। যদি সম্ভাব্য ব্যাংকের ওপর ফি আরোপ করে তাহলে এটি পরামর্শ দেয় যে অন্যান্য ব্যাংকগুলো করদাতাদের পরিবর্তে এসভিবি এবং সিগনেচারের খরচ বহন করতে পারে। তারপরও যদিও দুটি ঋণদাতা নিঃশেষ হয়, তবে এটি স্পষ্ট যে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা রক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রসারিত হয়েছে। কেননা উদার শর্তে ব্যাংকগুলো নগদের জন্য সম্পদ বিনিময় করতে পারে। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক সম্পাদক ওয়াল্টার ব্যাগেহট ১৮৭৩ সালে লিখেছিলেন, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জন্য শেষ অবলম্বন হিসেবে ঋণদাতা হিসাবে কাজ করা। ভালো জামানতের বিপরীতে, অবাধে ঋণ দেয়া। এটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে স্থিতিশীল করার অনুমতি দেয়। ফেডের এরই মধ্যে একটি ঋণ সুবিধা রয়েছে, যাকে ডিসকাউন্ট উইন্ডো বলা হয়, যেখানে ব্যাংকগুলো তাদের জামানতের বিপরীতে ন্যায্যমূল্যে ঋণ নিতে পারে। নতুন এই প্রোগ্রামটি কেবল তারল্য সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধেই ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করে না, এটি তাদের সুদের হারের ঝুঁকি থেকেও দূরে রাখে।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট