ইমরানের গ্রেপ্তার নিয়ে পাকিস্তানে চলছে লুকোচুরি খেলা!

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে দেশটিতে চলছে এক প্রকার লুকোচুরি খেলা। পুলিশ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করার জন্য বার বার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার না করে ফিরে আসছে। পুলিশ যখনই তাকে গ্রেপ্তার করতে যায় তখন ইমরান খানের দলীয় সমর্থকতের বাধার মুখে পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে এই কোন্দল চলছে। লাহোরে ইমরান খানের জামান পার্কের বাসভবনের কাছে গতকালও পিটিআই সমর্থকরা অবস্থান নেন। পুলিশ ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ব্যর্থ চেষ্টার পর পাঞ্জাব রেঞ্জার্সের একটি দল আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য তার বাসভবনে যায়। খবর বিবিসি ও ডন।

পুলিশ তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জন্য গতকাল সকাল থেকে নতুন করে তৎপরতা শুরু করে। তবে পিটিআই কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেন। দুই পক্ষের মধ্যে গত মঙ্গলবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের ৩০ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ১৫ পিটিআই কর্মীকে আটক করা হয়েছে। সর্বশেষ পিটিআইয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করছে। এক টুইটার বার্তায় ইমরান খান বলেছেন, কর্তৃপক্ষের আসল উদ্দেশ্য তাকে ‘অপহরণ ও হত্যা’ করা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্পষ্টতই গ্রেপ্তারের দাবি ছিল নিছক নাটক। কারণ, তাদের আসল উদ্দেশ্য অপহরণ ও হত্যা করা। ইমরান খান বলেন, টিয়ার গ্যাস ও জলকামানের পর এখন সরাসরি গুলি চালানোর পথ বেছে নিয়েছে তারা।

৭০ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ আরো দাবি করেন গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার পুলিশের ‘কোনো কারণ ছিল না।’ কারণ, তিনি শনিবার পর্যন্ত জামিন নিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, সরকার এর আগে ব্যর্থচেষ্টার পর তাকে কারাগারে রাখতে বদ্ধপরিকর।

তিনি আরো বলেন, আমি গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। ইমরান খান আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে তার দল যাতে অংশ না নেয় সে কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি কারাগারে থাকি বা না থাকি তারা আমার দলের জয় ঠেকাতে পারবে না।’ গত বছর অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং আগাম নির্বাচন দিয়ে ফের ক্ষমতায় আসার জন্য প্রচারণা চালানোর কারণে তাকে একাধিক আইনি মামলায় জড়ানো হয়েছে।

পুলিশ গত মঙ্গলবার দিবাগ রাতে ইমরান খানের জামান পার্কের বাসভবনের কাছে তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সমর্থকদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে। সেখানে অবস্থানরত বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে দেখা যায়। ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে খান একটি ভিডিও বার্তা দেন। এ বার্তায় তাকে টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টারে সজ্জিত একটি ডেস্কে পাকিস্তান ও পিটিআই’র পতাকার সামনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

‘আমি আজ সমগ্র জাতিকে বলছি যে, তারা আবারো প্রস্তুত, তারা আবারো আসছে। তারা আমাদের জনগণকে লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়বে এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ করবে, তবে আপনাদের জানা উচিত যে, তাদের এমনটা করার কোনো যুক্তি নেই।’ পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ওই ভিডিও বার্তায় তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নেমে এসে এর প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। ইমরান খানের এমন আহ্বানের পর ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচি ও পেশোয়ারে সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে।

এদিকে পিটিআই’র উপনেতা শাহ মাহমুদ কোরেশি গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ হতে চাই।’ কোরেশি বলেন, পুলিশের উচিত তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছে দেয়া। তিনি আরো বলেন, তিনি ‘রক্তপাত এড়াতে একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন।’ ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় ইমরান খান আগামী শনিবার আদালতে উপস্থিত হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি মুচলেকা স্বাক্ষর করার কথা এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন। একাধিকবার ডাকা সত্ত্বেও আদালতে হাজির না হওয়ায় খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

গতকালের বার্তায় ইমরান খান বলেছেন, তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতে যেতে পারেননি। কেননা, তার ওপর এর আগেও দুইবার হামলা হয়েছিল। ইমরান খানের আইনজীবী খাজা হারিস এবং তার দল এই পরোয়ানা স্থগিত করার জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। লাহোর আদালতেও অনুরূপ আবেদন দাখিল করবেন বলেও জানান পিটিআই) দলের নেতারা।