কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক বিভিন্ন ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে সারা দেশে। এসব বিষয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে সরেজমিন ক্যাম্পাস পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি কমিটি।
গত ১৩ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাসে আসেন কমিটির সদস্যরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিকাল ৫টায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তারা। দুপুর আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত ইউজিসির কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রেজিস্ট্রার, ডিন, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সিনিয়র অধ্যাপক, প্রকল্প পরিচালক, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক, অ্যান্টি র্যাগিং ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম ও সদস্য সচিব ইউজিসির উপসচিব মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান। কমিটির আরেক সদস্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। দেড় ঘন্টার বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কন্ঠের মতো’ ফাঁস হওয়া অডিও, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, প্ল্যানিং কমিটির নীতিমালা না মানা, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিবাদ, চলমান মেগা প্রজেক্ট, র্যাগিংবিরোধী সভাসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। কমিটি বৈঠকের সব কথা রেকর্ড করে নেন এবং ইউজিসির এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। জানা যায়, ইউজিসির কমিটির কাছে র্যাগিং কান্ডে নিজেদের দায় স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে এ ঘটনা ঘটত না। আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও তাৎক্ষণিক নেয়া উচিত। এ সময় অডিওকাণ্ডের কথা সরাসরি না বলে আকার ইঙ্গিতে ইউজিসিকে বিব্রতকর অবস্থার কথা জানান আরেক সিনিয়র শিক্ষক। বৈঠকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার। তিনি সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বৈঠকে বলেন, কিছু দায়িত্বশীল পদে যারা কাজ করেন তাদের বাসা ভাড়া মওকুফ করা দরকার, এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে ইউজিসির টিম বিভিন্ন কথা বলেন। র্যাগিংকাণ্ডে ইউজিসি বলেন, আবাসিক হলে রাতে শিক্ষক থাকলে এ ঘটনা এড়ানো যেত। কিছু দায়িত্বশীল পদে যারা কাজ করেন, তাদের বাসা ভাড়া মওকুফ করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন কমিটির আহ্বায়ক।
এছাড়া ইউজিসি শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, ইউজিসি ও সরকার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি দেখতে চায় না। প্ল্যানিং কমিটির প্রসঙ্গে বলেন নীতিমালা না মানা ঠিক হয়নি। কারণ, কমিটির প্রত্যেক সদস্য সম্মানিত সদস্য। বৈঠক শেষ করে চলমান মেগা প্রজেক্টের মেয়েদের দুটি হল পরিদর্শনে যান এই কমিটি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিরেক্টর অব প্ল্যানিং (পিডি) ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান এর কন্ঠ সদৃশ ও মঈন নামে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সাথে অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে এই অডিও সাথী খাতুন নামে একটি ফেইসবুক আইডি দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এ সময় লেনদেন সংক্রান্ত একই অডিওতে পর পর চারটি ভিন্ন ভিন্ন সময় কথোপকথন শোনা যায়। অডিও টি চারটি সময়ের কথপোকথন একসাথে সংযুক্ত করে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি অডিও প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফাঁস হওয়া অডিও কথোপকথনে রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসানের কণ্ঠসদৃশ ও মঈন নামে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির মধ্যে টাকার লেনদেন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এমদাদুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। আমরা প্রাথমিকভাবে তার কণ্ঠের সাদৃশ্য পেয়েছি। কর্মকর্তা সমিতির একটি জরুরি মিটিং ডেকেছি, মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা উপাচার্য কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব।
এই বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতি বিতর্কিত হয়ে গেল বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না। এমন ঘটনা ঘটলে আইনি পদক্ষেপের নিতে পারি। দেখি এ ব্যাপারে কী করা যায়।
উল্লেখ্য যে, এর আগে সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কণ্ঠসদৃশ একাধিক অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনায় জড়িত নেপথ্যের মানুষ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।