চার দফা সুযোগ দিয়েও কোটা পূরণ না হওয়ায় হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময় ফের ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে আর বাড়ানো হবে না বলেও জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে কোটা খালি থাকায় তা পূরণের আশায় শেষ পর্যন্ত আরও ৫ দিন বাড়িয়ে ২১ মার্চ নির্ধারিত হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ-১) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন গতকাল সন্ধ্যার দিকে আলোকিত বাংলাদেশকে এ তথ্য জানান। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১৫ হাজার এবং বাকিরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়, যা ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিবন্ধনে তেমন সাড়া না পাওয়ায় পরে সময় আরও ৫ দিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এরপরও নিবন্ধনের সংখ্যা খুব কম ছিল। ফলে নিবন্ধনের শেষ সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ করা হয়। এরপরও কোটা অনেক খালি থাকায় শেষবারের মতো ১৬ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করে দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ সময় আর বাড়ানো হবে না বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল। তবে গতকাল পূর্ব নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আধা ঘন্টা আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ নিবন্ধন সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৬৮৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ এক হাজার ১৩ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ নির্ধারিত কোটার চেয়ে সাড়ে ১৬ হাজার হজযাত্রী কম ছিল। এ বছর হজের খরচ অনেক বাড়ার কারণেই আগ্রহী অনেকে নিবন্ধন করেননি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে নতুন করে আগ্রহীদের সুযোগ দিতে এবং কোটা পূরণের জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর কথা বলেছিলেন হজ এজেন্সি মালিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ-১) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত হজযাত্রীদের বিশেষ অনুরোধে শেষবারের মতো বর্ধিত করা হলো। নিবন্ধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত রয়েছে। যারা এখনো পাসপোর্ট পাননি তাদের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ। কোটা পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী ২১ মার্চ হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সকল ব্যাংককে অফিস সময়ের পরেও প্রস্তুতকৃত ভাউচারসমূহের অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের শাখাসমূহ খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এদিকে হজের খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন মহলের দাবি সত্ত্বেও তা আমলে নিচ্ছে না সরকার। এখনও পর্যন্ত খরচ কমানোর কোন চিন্তা সরকারের নেই বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বিমান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে সৌদির নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে হজে যাওয়ার সুযোগ পাননি কেউ। গত বছর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় অর্ধেক কোটায় বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৬০ হাজার জন হজের সুযোগ পেয়েছিলেন। ওই বছর সৌদির শর্ত থাকায় ৬৫ বছরের বেশি কেউ হজের সুযোগ পাননি। ফলে বাংলাদেশের কোটার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ব্যক্তি হজে যেতে প্রাক-নিবন্ধন করে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এবার হজের খরচ হঠাৎ করে আগের চেয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেশি বেড়ে যাওয়ায় তা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই হজে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে সিরিয়ালে প্রথম দিকে থাকা ব্যক্তিরা নিবন্ধন না করায় পেছনের ব্যক্তিদের সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও কোটা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-হাবের সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মূলত সারা বিশ্বেই বিভিন্ন খরচ বেড়ে গেছে। চলমান ওমরাহ পালনেও সৌদিতে হোটেল ভাড়া অনেক বেড়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে এবার হজের খরচও বেড়েছে। তবে গতবার যেখানে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এবার এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এটা অনেকে বেড়েছে। তাছাড়া সৌদি আরবের মোয়াল্লেম ফি এবার অনেকে বাড়ানো হয়েছে, যা অযৌক্তি বলে মনে করেন তিনি।
হাব নেতা ফজলুর রহমান জানান, এবার খরচ বাড়ার কারণে আগে প্রাক-নিবন্ধিতদের অনেকে নিবন্ধন করেননি। তবে নতুন করে অনেকে নিবন্ধন করছেন। কোটা খালি থাকায় গতকালও অনেকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের সুযোগ পেয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আরও এক সপ্তাহ সময় পেলে কোটা পূরণ হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সৌদি আরব সরকার এ বছর হজযাত্রীদের ভিসার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক তথা আঙুলের ছাপপদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। এ জন্য হজযাত্রীদের ভিসা করার জন্য পাসপোর্ট আপাতত নিজের কাছে রাখতে বলা হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভিসার আবেদন সাবমিট করার জন্য বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার সরকারিভাবে হজে যেতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। আর বেসরকারিভাবে খরচ হবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে খরচ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ওই বছর হজ প্যাকেজে ডলারের দাম ধরা ছিল ৯৪ টাকা, সৌদি রিয়ালের দাম ধরা ছিল ২৪ দশমিক ৩০ টাকা। এবার ডলারের দাম ধরা হয়েছে ১০৪ টাকা, সৌদি রিয়ালের দাম ধরা হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিমানভাড়া বেড়ে যাওয়া, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজ প্যাকেজে খরচ বেড়েছে। এদিকে এবার হজের প্যাকেজ মূল্য কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।